জাঠ বিদ্রোহের কালো অধ্যায়

ভারতে গাড়ি থেকে নামিয়ে নারীদের ধর্ষণ

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে সম্প্রতি জাঠ বিক্ষোভ চলাকালে মুরথাল এলাকায় ধর্ষণসহ নানা প্রকার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু নারী। প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় ফেলে ওইসব নারী যাত্রীদের ওপর পাশবিকতা চালিয়েছিল অধিকারের দাবিতে সোচ্চার জাঠ সম্প্রদায়ের লোকজন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সাত দিনের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়েছিল ওই হিন্দু জনগোষ্ঠীটি।

বিক্ষোভের শেষ দিকে অর্থাৎ গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারিতে ওইসব ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছিল বলে শনিবার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বাসচালক অভিযোগ করেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ স্থানীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, জাঠ বিক্ষোভকারীদের হাতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে বেশ কয়েকজন নারী ধর্ষিতা হয়েছিলেন। এ ঘটনায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ওই রাজ্য দুটির সরকার ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগের প্রতি আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে।

সুখবিন্দর সিং নামের এক ট্রাকচালক টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার কাছে দাবি করেছেন, হরিয়ানার মুরথাল এলাকার হাসামপুর গ্রামের কাছে তিনি নিজে এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন,‘বিক্ষোভকারীরা অনেক নারী ও শিশুদের গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছিল। এটি আমার নিজের চোখে দেখা। আমি তাদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। সেনা সদস্যরা গাড়িতে নির্বিকার বসেছিল। তারা ওই নারী-শিশুদের উদ্ধারে এগিয়ে যায়নি। উপরন্তু আমাদের বলেছে,‘‘আমরা কি নিজেদের ভাই বেরাদরদের পেটাব?’’ বিক্ষোভকারীরা অন্য গাড়িগুলোর সঙ্গে তার ভাইয়ের ট্রাকেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন এই অনাচার সহ্য করতে না পেরে ওই ট্রাকচালক সেনাদের বলেছিলেন, ‘তাহলে আমাকে আপনারা একটি বন্দুক দিন যাতে আমি ওদের গুলি করতে পারি।’ কিন্তু তার ফরিয়াদে কেউ কর্নপাত করেনি।

ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। মোট তিনজন ট্রাকচালক ওই বার্তা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, হামলাকারীরা নারীদের টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে বের করে আনে। তাদের পোশাক ছিড়ে ফেলে তাদের ওপর যৌন নিপীড়ণ চালায়। পরে তাদের সড়ক সংলগ্ন মাঠটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। নারেশ কুমার নামের অন্য এক চালকের উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওই চালক গাড়ি থেকে নারী যাত্রীদের বের করে এনে ধর্ষণ করার মত পাশবিকতাও স্বচোখে দেখেছেন।

সত্য উদঘাটনে ইতিমধ্যে সরেজমিনে মুরথাল পরিদর্শন করেছেন টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিনিধি। তিনি সেখানকার মহাসড়ক সংলগ্ন একটি মাঠে নারীদের ছিন্ন বসন ও অন্তর্বাস দেখতে পেয়েছেন যা ওই পাশবিকতারই চিহ্ণ বহন করছে। পুলিশ ওইসব কাপড় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

পাঞ্জাবের নীরঞ্জন সিং নামের অন্য এক চালক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি জম্মু থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। এ সময় কান্নউর শহরে তিনি অন্য এক হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। মুরথাল থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে শহরটির অবস্থান। বিক্ষোভকারীরা তার ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ওই সড়কে নারী যাত্রীদের ওপরও অশোভন আচরণ করেছিল।



মন্তব্য চালু নেই