ভারতে আদর্শ ইসলামী সমাজ ব্যর্থ হয়েছে

বছর দশেক আগে ভারতের কেরালা রাজ্যের কিছু মুসলমান পরিবার আদর্শ গ্রাম তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। যারা এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা এখন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করছেন। খবর বিবিসির।

কেরালার কালিকট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এক ফাঁকা এলাকায়, জঙ্গলের পাশে আদর্শ ইসলামি সমাজ গড়ে নিজেদের মতো করে বসবাস করতে ২৫টি পরিবার গড়ে তুলেছিল আতিক্কঢ নামের ওই গ্রাম। বাইরের জগত থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে বিশুদ্ধ ইসলামী জীবনযাপন করতেই এই আদর্শ গ্রামটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য ছিল। যেখানে থাকবে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা আর বিরাজ করবে শান্তি। সবক’টি পরিবারই কট্টর ইসলামী চিন্তাধারা- সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী।

গণমাধ্যমকে নিজেদের গ্রামে ঢুকতে দিতে চান না সেখানকার অধিবাসীরা। কিন্তু সম্প্রতি সে গ্রামের একটি পরিবার কিছুটা সংকোচের সাথে বিবিসিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সেখানে। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসের আমানত সেলিম ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। তিন সন্তানের জনক মি. সেলিম বলছিলেন, কেরালার বর্তমান মুসলমান সমাজ বিশুদ্ধ ইসলামের পথ থেকে সরে গেছে। সে জন্যই আমরা ভেবেছিলাম নিজেরাই এমন একটা গ্রাম তৈরি করব, যেখানে সত্যিকারের ইসলামী পথ অনুসরণ করে থাকতে পারব আমরা। নিজেদের গাড়িতেই বাইরে যাব এবং ফিরে আসব। অন্য কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না, এ রকমই কল্পনা ছিল আমাদের।

গোটা গ্রামটা উঁচু একটা দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু যে কট্টর চিন্তাধারা থেকে এই পরিবারগুলো একত্রিত হয়েছিল, সে সালাফি মতবাদই ফাটল ধরিয়েছে তাদের ঐক্যে। গ্রামের মাদ্রাসাটির প্রধান শিক্ষক কেন ছোট বাচ্চাদের নিজের কোলে বসিয়ে শিক্ষা দেন, এ নিয়ে গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলেন। সকলেই মেনে নেন যে ওই শিক্ষকের শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু কী শাস্তি দেওয়া হবে, তা নিয়ে দেখা দেয় মতভেদ। একদল মনে করেন, ওই শিক্ষককে একবছরের জন্য বহিষ্কার করা হোক। অন্য পক্ষের মতে তাকে গ্রাম থেকে বার করে দেওয়া উচিত।

শেষমেশ ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে একবছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল হয়। কিন্তু যারা আরো বেশি শাস্তি দেবার পক্ষে ছিলেন, তারা এ সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এখন সে গ্রামে এখন মাত্র দশটি পরিবার বসবাস করে। সেলিমের পরিবার তাদের মধ্যে একটি। দু:খ করে তিনি বলছিলেন, যে আদর্শ গ্রাম তৈরির পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা, সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বাইরের জগত থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখাটাই বোধহয় আমাদের ভুল হয়েছে। আমি এখনও গ্রামে রয়ে গেছি বাচ্চা তিনটের জন্য। ওদের জন্ম তো এখানেই।



মন্তব্য চালু নেই