ভারতে অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে ওয়ার্ক পারমিট চালুর প্রস্তাব

ভারতের একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রস্তাব দিয়েছে, অনুপ্রবেশ রুখতে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট চালু করা হোক। পাচার রোধে সীমান্ত হাটগুলোর মাধ্যমে গরু রফতানির জন্যও প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী আম্বানিদের অর্থানুকূল্যে চলা ওই থিঙ্কট্যাঙ্ক– অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ সম্বন্ধীয় ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সীমান্তের দুপাশে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় বিশেষ সীমান্ত অঞ্চল গড়ে তুলুক দুই দেশ– যেখানে যৌথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চলবে। খবর বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনটির মূল রচয়িতা অধ্যাপিকা অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্ত এলাকা তো শুধু মানচিত্রের একটা রেখা নয়, সেখানে জমি রয়েছে, মানুষ রয়েছেন। আমরা মনে করেছি, বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ পশ্চিমবঙ্গে কাজে আসেন যাদের কোনো পরিচয়পত্র থাকে না। তাদের জন্য গোষ্ঠীবদ্ধভাবে ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। তার ফলে গোটা সীমান্ত এলাকায় আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।’

সীমান্ত এলাকার মানুষদের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের উপদেশ ছাড়াও ও আর এফ বলছে, ভারত থেকে যখন গরু পাচার বন্ধ করা যাচ্ছেই না, আর বাংলাদেশেও গরুর মাংসের চাহিদা ক্রমবর্ধমান, তখন গরু পাচারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। প্রস্তাবিত সীমান্ত হাটগুলোর মাধ্যমে গরু রফতানিকে আইনি সিলমোহর দেওয়া হোক– যা থেকে ভারত সরকার উপার্জনও করতে পারবে আর সীমান্তের অন্যতম একটা বড় এই গরু পাচারের সমস্যা বা তার সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতিমূলক কাজও বন্ধ হবে।

ভারতের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা দেখভালের দায়িত্ব যে মন্ত্রকের, সেই স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওয়ার্ক পারমিটের বিষয়টা তো পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা যেতেই পারে। তবে সেক্ষেত্রে কারা আসছেন, কোথায় কাজ করতে আসছেন, কতক্ষণের জন্য কাজ করতে আসবেন, এসবই রেকর্ড রাখতে হবে।’

ওআরএফ তাদের প্রতিবেদনে একটি প্রায় বৈপ্লবিক প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলছে, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ৩০ কিলোমিটার এলাকাকে বিশেষ সীমান্ত অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলা হোক। দ্বিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চল বা বিবিজেডগুলোকে বিশেষ আর্থ-সামাজিক এলাকা বলে ঘোষণা করা হোক আর দুই দেশের যৌথ প্রশাসন চলুক সেখানে। তবে ওই বিশেষ এলাকায় কোনো দেশকেই তাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিতে হবে না।

অধ্যাপিকা অনসুয়া বসু রায় চৌধুরীর কথায়, ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে এই প্রস্তাব নতুন মনে হলেও পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু আছে। যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা তখনই সম্ভব, যখন দুই দেশের সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস থাকবে। আমাদের মনে হয়েছে ভারত আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে সহযোগিতার বাতাবরণ এখন তৈরি হয়েছে, তাতে যৌথভাবে সীমান্ত প্রশাসন চালানো যেতেই পারে।’

কংগ্রেস নেতা ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য এই ধারণাটিকে ইউটোপিয়ান বা অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন।

নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠীর অর্থানুকূল্যে চলা ওআরএফের প্রতিবেদনে সীমান্ত অঞ্চল উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হলেও নরেন্দ্র মোদি নিজে অথবা তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বারবারেই ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশে যাতে একটিও গরু পাচার না হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে বিএসএফকে। এটাও বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ থেকে কোনও হিন্দু ব্যক্তি পালিয়ে এলে তাকে শরণার্থী আখ্যা দেওয়া হবে, তবে মুসলমানরা চলে এলে অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করে পুশব্যাক করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই