ভারতের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনা

ভারতের সাধারণ নির্বাচনের প্রথম দিনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরার কয়েকটি আসনে ভোট হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়ে ১২ই মে পর্যন্ত মোট ন’দফায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন জনমত জরিপে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিকে এই নির্বাচনে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটি আজ তার নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছে। অন্য যেসব দেশ বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে, প্রতিবেশী ভারত যে সেই তালিকার শীর্ষে সন্দেহ নেই। ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা, গুজরাট দাঙ্গার কারণে বিতর্কিত রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা — এসব নিয়ে বাংলাদেশে চিন্তা-ভাবনা কি? ভারতে এই নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সেটি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের ভেতর নানা হিসেব নিকেশ ও কৌতূহল রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে ভালো ছিল।”যে আশংকার কথাটা অনেকের মধ্যে রয়েছে, আমরা এটুকু বলতে পারি – ওয়েট এন্ড সি”নূহ উল আলম লেনিন, আওয়ামী লীগ একথা বিভিন্ন সময় দুই পক্ষই প্রকাশ্যে বলেছে। কিন্তু এখন ভারতে ক্ষমতার পালা বদল হলে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে ? বিজেপি ক্ষমতাসীন হলে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক কতটা উষ্ণ থাকবে সেদিকেও অনেকের নজর রয়েছে । আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন মনে করেন, ভারতে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন সেখানে ভারতের নীতির ক্ষেত্রে মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতার ফ্যাক্টরকে বরাবরই সামনে নিয়ে আসে বিএনপি। দলটি মনে করে, বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন করার জন্য ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। বিএনপির অনেক নেতাই ভারতের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন।”ভারতে ৮২ কোটির বেশি মানুষ ভোট দেবে । সেখানে যদি নরেন্দ্র মোদি বিজয়ী হয়ে আসেন তাহলে তো আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না । আপনি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাহলে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তাকে মেনে নিতে হবে”ওসমান ফারুক, বিএনপি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড: ওসমান ফারুক বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের স্বাগত জানাবে বিএনপি। কিন্তু ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সম্ভাবনাই এখনও পর্যন্ত বেশি দেখা যাচ্ছে। গুজরাট দাঙ্গায় মুসলিম নিধনের ঘটনায় এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন মি: মোদি। সাম্প্রদায়িক দল হিসেবেও বিজেপির পরিচিতি রয়েছে । নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে সেটিকে বিএনপি কিভাবে দেখবে ? ড: ফারুক বলেন , “ভারতে ৮২ কোটির বেশি মানুষ ভোট দেবে । সেখানে যদি নরেন্দ্র মোদি বিজয়ী হয়ে আসেন তাহলে তো আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না । আপনি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাহলে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তাকে মেনে নিতে হবে। ” মি: লেনিন বলেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যে দাঙ্গা হয়েছে সেটা মানুষের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকাটা স্বাভাবিক। “যে আশংকার কথাটা অনেকের মধ্যে রয়েছে, আমরা এটুকু বলতে পারি – ওয়েট এন্ড সি। ” বলেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো সাধারণ মানুষজনের মধ্যেও ভারতের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম নয়। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণের একটি অংশের মধ্যে ভারত বিরোধিতাও রয়েছে। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ভারতের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে না পারলেও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সে বিষয়ে প্রবল আগ্রহ আছে । তাদের অনেকেই মনে করেন, ভারতে কোন দল ক্ষমতায় থাকবে তার উপর বাংলাদেশের রাজনীতিও অনেকাংশে প্রভাবিত হবে । ভারতে কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে । বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কে এম এস শাফি বলেন, “বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশেও নেতৃত্বের প্রেক্ষাপট চেঞ্জ হতে পারে ।” তবে বিজেপির সাম্প্রদায়িক চরিত্র নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন । বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন বিজেপি মুসলিম বিদ্বেষী । মাসরুর সালেহিন বলেন, “বিজেপির মনোভাব মুসলিম বিরোধী । অন্যদিকে, আমরা মুসলিম প্রধান দেশ । তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আমাদের জন্য ভালো হবে না । ” বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুসাবির আহমেদ সাকিব বলেন, “বিজেপির যিনি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেবার অভিযোগ রয়েছে । নরেন্দ্র মোদি জয়লাভ করলে বাংলাদেশের মানুষের সেটি স্বাভাবিকভাবে নেয়ার কোন কারণ নাই ।”



মন্তব্য চালু নেই