ভারতের বিদায়, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

স্ট্রেলিয়ার করা ৩২৮ রান টপকে জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে। কারণ বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ৩০০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড কোনো দলেরই ছিল না। এবার ভারতও পারেনি।

সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩২৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে রানে ২৩৩ অলআউট হয়ে গেছে ভারত। ৯৫ রানের জয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই সঙ্গে সেমিফাইনালে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও ধরে রেখেছেন অসিরা। আর বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

বৃহস্পতিবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ৩২৮ রানের বড় স্কোর গড়ে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে অসি পেসারদের তোপে পড়ে ৪৬.৫ ওভারে ২৩৩ রানে অলআউট হয় ভারত।

৩২৯ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারতকে ভালো সূচনা এনে দেন শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। ফিফটি রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দুজন। তবে দলীয় ৭৬ রানে জশ হাজেলউডের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচে পরিণত হন ধাওয়ান। ৪১ বলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় তার সংগ্রহ ৪৫ রান।

তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে এদিনও ব্যর্থ হন বিরাট কোহলি। ৭৬ রানে ধাওয়ানের বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে আর ২ রান জমা হতেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। মিচেল জনসনের বলে ব্র্যাড হাডিনের গ্লাভসবন্দি হন ১ রান করা কোহলি। আগের ম্যাচেও মাত্র ৩ রান করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

এরপর এক প্রান্ত আগলে রাখা রোহিত শর্মাও ফিরে যান দলীয় ৯১ রানে। জনসনের করা ইনিংসের ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। তবে পরের বলেই তাকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান জনসন। ৪৮ বলে ২ ছক্কা ও এক চারে রোহিতের সংগ্রহ ৩৪ রান। দলীয় ১০৮ রানে বিদায় নেন সুরেশ রায়না (৭)। জেমস ফকনারের বলে উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন হাডিন।

১০৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন আজিঙ্কা রাহানে ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে রাহানেকে ফিরিয়ে ৭০ রানের জুটি ভাঙেন মিচেল স্টার্ক। হাডিনের গ্লাভসবন্দি হন ৪৪ রান করা রাহানে। এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে দলের স্কোর ২০০ পার করেন ধোনি। তবে ২০৮ রানে স্মিথের সরাসরি থ্রোতে রানআউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন জাদেজা (১৬)।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ৩২৮ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনালে এই প্রথম কোনো দল ৩০০ বা তার বেশি রান করল।

দারুণ এক সেঞ্চুরিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০৫ রান করেন স্টিভেন স্মিথ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮১ রান আসে অ্যারন ফিঞ্চের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া শেষ দিকে মাত্র ৯ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন মিচেল জনসন।

ভারতের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন উমেশ যাদব। ২ উইকেট জমা পড়ে মোহিত শর্মার ঝুলিতে।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ভারতীয় পেসার উমেশ যাদবের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ডেভিড ওয়ার্নার। কাভারে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অসি ওপেনার। ৭ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ওয়ার্নারের সংগ্রহ ১২ রান।

শুরুতে ওয়ার্নারের উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভেন স্মিথ। দুজনই দারুণ দুটি ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ইনিংসের ৩৩তম ওভারে মোহাম্মদ সামির বলে চার মেরে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন স্মিথ।

সেঞ্চুরি করার একটু পর বিদায় নেন স্মিথ। উমেশ যাদবের বলে রোহিত শর্মার ক্যাচে পরিণত হন স্মিথ। ৯৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ফিঞ্চ-স্মিথ জুটিতে আসে ১৮২ রান।

স্মিথের বিদায়ের পর নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দলীয় ২৩২ রানে রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আজিঙ্কা রাহানের তালুবন্দি হন তিনি। ১৪ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ম্যাক্সওয়েলের সংগ্রহ ২৩ রান।

এরপর স্কোরবোর্ডে আর ১ রান জমা হতেই ফিরে যান ফিঞ্চ। যাদবের বলে শিখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১১৬ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৮১ রান করেন এই ওপেনার। দলীয় ২৪৮ রানে ব্যক্তিগত ১০ রান করে ফেরেন মাইকেল ক্লার্ক। মোহিত শর্মার বলে রোহিত শর্মার হাতে ধরা পড়েন অসি অধিনায়ক।

ক্লার্কের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়েন শেন ওয়াটসন ও জেমস ফকনার। ২১ রান করে যাদবের বলে বোল্ড হন ফকনার। তার ১২ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও একটি ছক্কার মার। দলীয় ২৯৮ রানে ব্যক্তিগত ২৮ রান করে ফেরেন ওয়াটসন। আর শেষ দিকে মাত্র ৯ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলের স্কোর পাহাড়ে তোলেন মিচেল জনসন।

এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কোয়ার্টার ফাইনালের একাদশ নিয়েই খেলছে দুই দল।

সিডনির অতীত ইতিহাস জানাচ্ছে, ওয়ানডেতে এই মাঠে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে ৮২ বার, আর আগে বোলিং করা দল ৬১ বার।

বিশ্বকাপে এর আগে ছয়বার সেমিফাইনাল খেলে একবারও হারেনি অস্ট্রেলিয়া। পাঁচটিতে জয়, একটি টাই। আর ভারত তিনবার সেমিফাইনাল খেলে জিতেছে দুবার, হেরেছে একবার।

বিশ্বকাপে এর আগে দশবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। যার সাতবারই জিতেছেন অসিরা। ভারতীয়দের জয় বাকি তিনটিতে।

অস্ট্রেলিয়া দল : মাইকেল ক্লার্ক (অধিনায়ক), অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ব্র্যাড হাডিন, জেমস ফকনার, মিচেল জনসন, মিচেল স্টার্ক, জশ হাজেলউড।

ভারতীয় দল : মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ সামি, উমেশ যাদব, মোহিত শর্মা।



মন্তব্য চালু নেই