ভারতকে জেতাতেই মাঠে নেমেছিলেন আম্পায়াররা : তসলিমা

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়াররা যে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন সেটা এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। বিষয়টি নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। বাংলাদেশের বিতর্কিক লেখক তসলিমা নাসরিনও এই বিতর্কে সামিল হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন ভারতকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে আইসিসি সব কিছুই করছে। আম্পায়াররাও ভারতকে জেতানোর জন্যই মাঠে নেমেছিলেন।

তবে তিনি বাংলাদেশ দলেরও সমালোচনা করেছেন। জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। আরো ভালো খেলতে হবে। ফেসবুক থেকে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

‘‘ভারতকে যেভাবেই হোক, বিশ্বকাপে যত দীর্ঘ দিন সম্ভব, বাঁচিয়ে রাখতে হবে–এই হলো আইসিসির সংকল্প। শুরুতেই ভারত খেলা থেকে চলে গেলে কী অবস্থা দাঁড়ায়, তা ২০০৭ সালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল আইসিসি। ভারতের বিশাল জনসংখ্যা টিভিতে খেলা দেখেনি, সুতরাং বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে, স্পনসর পাওয়া যায়নি, ক্রিকেট টুরিজম লাটে উঠেছে।

এভাবে যে চলে না তা বুঝে আইসিসি সেই থেকে যে করেই হোক ভারতের হেরে যাওয়া আর ঘরে ফিরে যাওয়া ঠেকাচ্ছে। ফাইনালটা না হলেও অন্তত সেমি-ফাইনালটা যেন ভারতকে দিয়ে খেলাতে পারে। আম্পায়াররাও এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন তাঁদের কাছ থেকে আইসিসি কী আশা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার গুটিকয় দেশ ছাড়া আর কোনও দেশ, এমনকী নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াও পুরো জাতিকে ক্রিকেটক্রেজি বানাতে পারেনি।

গতকালের ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আম্পায়াররা ভারতকে জেতানোর উদ্দেশেই মাঠে নেমেছিলেন, তা একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়। শুরুতে ম্যাচটা জমবে বলে মনে করা হয়েছিল, অবশ্য খানিকটা গড়াতেই ম্যাচ ঝুলে পড়লো। আমার বাড়িতে যাঁরা ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন, তাঁরাও, ভারত দুশ’ আশি/পঁচাশি রান করার পরই উঠে চলে গেলেন কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন ভারত হাসতে হাসতে জিতবে। যদিও আমি প্রচুর মিষ্টি খাওয়াবার ব্যবস্থা করেছিলাম, এই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ভারতীয়দের তেমন কোনও উত্তেজনা লক্ষ্য করিনি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পাকিন্তান জিতলে, ভারত মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের, সেটি দেখার জন্য উদগ্রীব ভারতীয় জনতা। পাকিস্তানকে হারাতে যত আনন্দ ভারতের, তত আনন্দ আর অন্য কোনও দেশকে হারিয়ে হয় না। ম্যাচফিক্সিং, বেটিং, এসবের মতো রাজনীতিটাও ক্রিকেটের অংশ হয়ে গেছে।

ভাবছিলাম কাল যদি আম্পায়াররা ভারতকে জেতানোর উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে না নামতেন, যদি একশভাগ নিরপেক্ষ থাকতেন, যদি যে আউটগুলো এবং ছক্কাগুলো হওয়ার কথা, সেই আউটগুলো আর ছক্কাগুলো দিতেন, তবে কি ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিততে পারতো? আমি কিন্তু শিওর নই। কাল বাংলাদেশের ফিল্ডিংএর সমালোচনা শুনেছি, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্ডারস্টেন্ডিংএর অভাবটাও চোখে পড়ার মতো, তা ছাড়া অধিনায়কের অবয়বে ফ্রাস্ট্রেশনও খুব স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছিলো, এতে খেলোয়াড়দের নার্ভাস হয়ে পড়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু কাল থেকে ফেসবুকে বাংলাদেশ টিমের ভক্তদের যে আস্ফালন দেখছি তাতে একটু অস্বস্তিতে পড়েছি। সবারই বক্তব্য কাল বাংলাদেশ নির্ঘাত জিততো, কিন্তু বাংলাদেশকে আম্পায়াররাই জিততে দেয়নি।

আত্মসমালোচনা না করলে কোনও জাতি বা মানুষ উন্নতি করতে পারে না। অনেক সময় ভক্তদের অতিভক্তি খেলোয়াড়দের অহংকার এত বেশি বাড়িয়ে দেয় যে, খেলোয়াড়রা নিজেদের ত্রুটি সংশোধন করার প্রয়োজন তো মনে করেই না, আরও ভালো খেলার জন্য চেষ্টা করতেও আলস্য বোধ করে। এটাই না আবার বাংলাদেশ টিমের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।’’



মন্তব্য চালু নেই