ভাদ্রের খরতাপে শিশুর বাড়তি যত্ন

ভাদ্র মাসের দুঃসহ গরম আর রোদের খরতাপে জনজীবন বিপর্যস্ত। অতিরিক্ত গরমে বড়দের মতো শিশুরাও নাজেহাল। এ সময়ে শিশুর জন্য চাই বাড়তি যত্ন।

ভাদ্র মাসে শুরু হওয়া ভ্যাপসা গরম আশ্বিন, অর্থাৎ শরৎকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকে। এতে প্রচণ্ড গরম পড়ে, বদলে যায় মৌসুম।

গরমে বড়দের মতো শিশুরাও অস্বস্তিতে ভোগে। তাই খাওয়া, পোশাক, গোসল সব কিছুতেই চাই বিশেষ নজর। তা নাহলে তীব্র গরমে যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে আপনার আদরের সোনামণি।

গরমে শিশুরাই বেশি রোগাক্রান্ত হয়। সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, জ্বর লেগেই থাকে। তবে মৌসুমি অসুখ বলে এগুলো কম গুরুত্ব দেয়া যাবে না।

কারণ সর্দি-কাশি থেকেই দেখা দিতে পারে নিউমোনিয়া, হালকা শ্বাসকষ্ট থেকে হতে পারে ব্রংকিওলাইটিসসহ নানা সমস্যা। চিকেন পক্সের আশংকাটাও রয়েছে।

তাই এ সময়ে বেশি তাপমাত্রার জ্বর, জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি, ৪-৫ দিনের বেশি জ্বর, শরীরে র‌্যাশ, বেশি কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বাবা মায়ের সচেতনতা আর বাড়তি যত্ন পারে এ গরমে শিশুকে অনেকটা স্বস্তি আর সুস্থতা দিতে।

প্রচণ্ড গরম, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা, লোডশেডিংয়ের কারণে বড়দের মতো শিশুরাও অধিক পরিমাণে ঘামে এবং সেই ঘাম গায়ে শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুর গায়ের জামা ঘামে ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিন এবং শরীর পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে দিন। যাতে গায়ের মধ্যে ঘাম না শুকিয়ে যায়। নাহলে এ গরমে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

সর্দি-কাশি থেকে হতে পারে খুশখুশি কাশিও। অনেকেরই ধারণা জ্বর, সর্দি-কাশিতে প্রতিদিন গোসল করানো যাবে না। এ ধারণা ঠিক নয়। বরং এ সময় প্রতিদিন গোসল না করালে গরম আর ঘামে ঠাণ্ডা বসে শিশু আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই প্রতিদিন গোসল করান।

জ্বর হলে বারবার কাপড় ভিজেয়ে শরীর চেপে চেপে স্পঞ্জ করে দিন। সর্দি-কাশিতে ঘরোয়া দাওয়াই বেশি উপকারি। এ সময় সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে, আদার রস, আদা লেবু চা খাওয়াতে পারেন।

চিকেন পক্স এ ঋতুর আরেকটি পরিচিত রোগ। তবে শিশুর চিকেন পক্স হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবস্থা নিতে হবে। পক্স হওয়ার ৪-৫ দিন পর নিমপাতা ও হলুদ একসঙ্গে বেটে পুরো শরীরে মাখিয়ে নিয়মিত ৪-৫ দিন গোসল করাতে হবে। সম্ভব হলে গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে শিশুকে কিছুদিন গোসল করিয়ে দিন। পক্স হলে শরীরে অনেক দাগ হয়ে যায়। দাগ দূর করতে ডাবের পানি দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন বেলা দাগের জায়গাগুলো ধুয়ে দিন।

চিকেন পক্সের দাগের জন্য ডাবের পানি খুব উপকারী। ব্যবহার করতে পারেন পক্সের দাগ দূর করতে বিশেষ লোশন। আর এ রোগগুলো ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিবারে অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুকে তার থেকে দূরে রাখুন।

এ সময়ে শিশুকে ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করতে খাবার ঢেকে রাখুন। খাওয়ার আগে ও পরে মা ও শিশু দুজনেই হাত ভালো করে ধুয়ে নিন এবং হাতের নখ ছোট রাখুন।

বুকের দুধ খাওয়া শিশুর ডায়রিয়া হলে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এর সঙ্গে ঘনঘন স্যালাইন, শবরত, চিঁড়ার পানি ইত্যাদি তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

গরমের কারণে শিশুদের ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জিতে সারা শরীর লালচে হয়ে যাওয়া, শরীর চুলকানো, মুখে বা শরীরে গুটি গুটি হয়ে উঠতে দেখা যায়। ঘামাচি হলে কখনোই নখ দিয়ে তা খুটতে নেই। এতে সংক্রমণ হয়ে ত্বক রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে। ঘামাচি প্রতিরোধে প্রতিদিন স্বাভাবিক পানিতে গোসল করিয়ে দিন। এরপর ভালো কোনো ঘামাচি রোধক পাউডার লাগিয়ে দিন।

রাতে ঘুমানোর আগেও এ পাউডার দিয়ে দিতে পারেন। এতে শিশু ঘামাচির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি ঘুমাতেও আরামবোধ করবে। গরমে শিশুকে গোসলের পর খুব বেশি লোশন, বেবি অয়েল লাগানো উচিত নয়।

অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় গরমে শিশুদের চুলের যত্ন নেয়া বেশি জরুরি। অনেক শিশুরই গরমে মাথায় ঘামাচি হয়, চুলের গোড়া ভিজে থাকে। তাই এসময় চুল কিছুটা ছেঁটে ছোট করে দিন কিংবা ন্যাড়া করে দিন। এতে বেশ আরাম বোধ করবে।

এ গরমে সুস্থ রাখতে লাউ, করলা, কুমড়া, চিচিঙ্গা, পেঁপেসহ নানারকম সবজি খেতে দিন। তরকারি খেতে না চাইলে এগুলো দিয়ে সবজি খিচুড়ি রান্না করে দিন। অবশ্যই তেল কম দিতে হবে।

চিপস, চকলেটসহ বাইরের নানা রকম কেনা খাবার এড়িয়ে তরমুজ, বাঙ্গি, বেলসহ নানা রকম রসালো ও মৌসুমি ফল বেশি বেশি খেতে দিন। সরাসরি খেতে না চাইলে জুস করে দিন। তরল জাতীয় খাবার, ঝোলের তরকারি, প্রচুর পানি যতটা সম্ভব খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

গরমে শিশুর পোশাকের দিকটি অবশ্যই নজর দেয়া উচিত। পাতলা সুতি কাপড়ই এ সময়ে জন্য আরামদায়ক। হাতাকাটা পোশাক পরানো ভালো।



মন্তব্য চালু নেই