ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে বোনের দৌড়

প্রাযুক্তিক এই সময়ে প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যাচ্ছে মানব সম্পর্ক। পারিবারিক যৌথায়ন ভেঙ্গে এখন শতধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু একক পরিবার নিয়েই মানুষ সন্তুষ্ট হচ্ছে না, একেবারেই একা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু রক্তের সম্পর্কের টান বলে একটা কথা থেকেই যায়। সেই সম্পর্কের মানুষ যত দূরেই থাকুক না কেন, বিপদে আপদে ওই কাছের জনের কথাই সবার আগে মনে পরে। রক্তজাত সম্পর্কগুলোর মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক অনেক বেশি মধুর। যার নজির আরও একবার পাওয়া গেল ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোদ্দা গ্রামে।

রাস্তা ভালো নয়, হাসপাতালও অনেকটা পথ। কিন্তু অসুস্থ ভাইকে নিয়ে যত জলদি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তা না হলে যেকোনো অঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই চিন্তা করতে করতেই ১১ বছর বয়সী বালিকা মালতি তার ভাই মাইকেলকে তুলে নিলেন কাধে। টানা আট কিলোমিটার দৌড়ে গিয়ে তবেই ভাইকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। কিছুদিন ধরেই মাইকেল ম্যালেরিয়ায় ভুগছিলেন। গত সোমবার মাইকেলের অবস্থা বেশ খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

কয়েক বছর আগেই মাইকেল-মালতির বাবা-মা মারা যায়। এরপর থেকে দাদা-দাদির সঙ্গেই থাকে এই দুই ভাই-বোন। ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভাড়া দরকার তাও ছিল না তাদের কাছে। এরকমই এক অবস্থায় অন্য উপায় না দেখে মালতি তার ভাইকে নিয়ে যায় স্থানীয় হেলথকেয়ার সেন্টারে। সেখান থেকে একজন সমাজকর্মী মাইকেলকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।

গোদ্দার সিভিল সার্জন ড. সিকে সাই বলেন, মেয়েটি বেশ বুদ্ধিমান। ম্যালেরিয়া সম্পর্কে মেয়েটির তেমন কোনো ধারণা না থাকলেও মানুষের মুখে সে এই রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছে, যে কারণে সে তার ভাইকে এভাবে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমরা এখন ওই শিশুটির চিকিৎসা করছি এবং খুব তারাতারিই সে সুস্থ হয়ে যাবে।

তবে ডাক্তার যাই বলুক যে, মালতির ম্যালেরিয়া সম্পর্কে জ্ঞান নেই কিন্তু নিজের বাবা-মাকে এই রোগেই মারা যেতে দেখেছে সে। যে কারণে ম্যালেরিয়া কিভাবে হয় সেটা মালতি না জানলেও, এই রোগের কারণে মানুষ মারা যায় সেই জ্ঞান তার ঠিকই হয়েছে। তাইতো বয়সের বোঝা বাইবার ক্ষমতা না ভেবেও ভাইকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল সে। প্রাণীকূলের মধ্যে এই মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাত প্রায়শই দেখা যায়।

ভারতের ঝাড়খন্ড এমনিতেই ম্যালেরিয়াপ্রবন অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এই অঞ্চলে সেই তুলনায় কোনো হাসপাতাল না থাকায় অনেক মানুষই ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। নামকেওয়াস্তে কিছু সরকারি হাসপাতাল থাকলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে গরীব মানুষদের জেলা হাসপাতালের দিকে যেতে হয়। এমনও শোনা যায়, জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য চাষের জমিও বিক্রি করতে হয় অনেককে।



মন্তব্য চালু নেই