বয়স ৯, থাকে বস্তিতে, তবু গরিব বাচ্চাদের জন্য এই মেয়েই বানিয়েছে এক ফ্রি লাইব্রেরি

নাম মুসকান আহিরওয়ার। বয়স ৯ বছর। তার বয়সি অন্য মেয়েরা যখন‌ খেলাধুলো, আর পড়াশোনা করে দিনযাপন করে, তখন সে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ফেলেছে। সে তারই বয়সি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য তৈরি করেছে একটি ফ্রি লাইব্রেরি।

মুসকান নিজেও ভোপালের একটি বস্তিতেই থাকে। তার নিজের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও মোটেই ভাল নয়। আর সেই কারণেই হয়তো সে বোঝে দারিদ্র্যের জ্বালা। এই একরত্তি বয়সেই সে বুঝে ফেলেছে আরও এক মহৎ সত্য। সেটা এই যে, শিক্ষাই মানুষের জীবন থেকে দূর করতে পারে দারিদ্র্য ও যন্ত্রণার অন্ধকার। তাই নিজের সীম‌িত সাধ্যকে কাজে লাগিয়ে সে তার বস্তির অন্য বাচ্চাদের জন্য তৈরি করেছে একটি ফ্রি লাইব্রেরি।

২০১৬-র জানুয়ারিতেই যাত্রা শুরু করেছে মুসকানের এই লাইব্রেরি। কেন হঠাৎ এমন দুঃসাহসী একটি পদক্ষেপ নিতে গেল সে, বিশেষত তার আর্থিক সামর্থ্যও যখন সামান্যই? মুসকানকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে জানায়, অল্প বয়সেই তার মনে হয়েছিল যে, যেসব বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, তাদের নিজেদের মতো করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ অন্তত মেলা উচিত। সেই কারণেই সে স্থির করে, গরিব ঘরের বাচ্চাদের জন্য তৈরি করবে একটি বিনিপয়সার লাইব্রেরি।

প্রথম যখন চালু হয় মুসকানের এই লাইব্রেরি, তখন সেখানে মোট বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫। কিন্তু তার উৎসাহ সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্য মানুষের। দরাজ হাতে পাড়া-প্রতিবেশীরা বই দান করতে শুরু করেন মুসকানের গ্রন্থাগারে। বই আসতে থাকে দেশের অন্যান্য রাজ্য, এমনকী, আমেরিকা ও ব্রিটেন থেকেও। এখন মুসকানের লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০০।

রোজ সন্ধ্যাবেলা এই লাইব্রেরির দরজা খুলে দেয় মুসকান। এক এক করে শুরু হয় বস্তির অন্য বাচ্চাদের আগমন। প্রতিদিন অন্তত জনা পঁচিশ বাচ্চা আসে লাইব্রেরিতে। ইচ্ছেমতো বই পড়ে তারা, খেলে, গল্প করে, কখনও কখনও তাদের জন্য মজাদার সব প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে মুসকান।

আজ বস্তির সকলের চোখের মণি মুসকান। সকলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ। হাজার হোক, পাড়ার ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশোনার একটা বন্দোবস্ত তো করে দিতে পেরেছে সে। আর মুসকান? কী বলছে সে নিজে? সে বলছে, ‘আমার পাড়ায় একটা লাইব্রেরির বড় দরকার ছিল। আগে দেখতাম, সন্ধে হলেই বাচ্চারা রাস্তায় এলোমেলো ঘুরে বেড়াত।

আর এখন সন্ধে হলেই তারা সব ভীড় করে লাইব্রেরিতে। এই পরিবর্তনটা খুব ভাল লাগে। আমার তো মনে হয়, যাঁরা নিজেরা পড়াশোনা ভালবাসেন, তাঁদের সকলের এই ধরনের লাইব্রেরি তৈরিতে সচেষ্ট হওয়া উচিত’’, উজ্জ্বল হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলছে এই ব্যতিক্রমী কিশোরী। তার জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।



মন্তব্য চালু নেই