ব্যাকটেরিয়াও কথা বলে

পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ ক্রমাগত বাড়ছে। যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো ব্যাকটেরিয়ায় প্রতিষেধক হিসেবে তৈরি করছে নানান অ্যান্টিবায়োটিক। গত বছর বিজ্ঞানীরা শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন যে, পৃথিবীতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এই অ্যান্টিবায়োটিক কমে যাওয়ার ফলে বেড়ে যেতে পারে বাকটেরিয়াদের আক্রমন। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়ার কিছু বিচিত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছেন, যেখানে তারা দাবি করছেন যে ব্যাকটেরিয়ারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের কারণে কথাও বলে।

যুক্তরাষ্ট্রের জৈব বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুরা যেভাবে চৌম্বকিয় তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এবং এই গননাতীত যোগাযোগের ফলেই মানুষ প্রতিদিন কর্মক্ষম থাকছে। তেমনি ব্যাকটেরিয়াদেরও আছে এরকম এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করে একে অপরের সঙ্গে। মস্তিস্কে থাকা এসকল ব্যাকটেরিয়া একটির সঙ্গে অপরটির সংঘর্ষ হলে সেখানে ইলেকক্ট্রিক চার্জের মাধ্যমে পটাশিয়ামের অতিক্ষুদ্র কণা যাকে আয়ন বলা হয়, তার সৃষ্টি হয়। পটাশিয়াম কণায় সৃষ্ট এই আয়ন শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে আমাদের মস্তিস্কে সংকেত দেয়, যার ফলে কেউ কথা বললে আমরা শুনতে পাই। আর সঙ্গে সঙ্গে কথার জবাবও দিতে পারি। মস্তিস্কে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো স্নায়ুকোষে একটি ধারাবাহিক পর্যায়ক্রমিক চক্রে বড়তে থাকে।

ব্যাকটেরিয়ার এই কলোনিগুলোর রয়েছে অদ্ভুত কিছু আচরণ, যা এতোদিন জৈব বিজ্ঞানীরা ধরতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা খেয়াল করে দেখেছেন, ব্যাকটেরিয়াদের কলোনির মধ্যবর্তী অবস্থানে যে অপরিপুষ্ট ব্যাকটেরিয়ারা থাকে, সচল এবং পুষ্ট ব্যাকটেরিয়ারা যোগাযোগের মাধ্যমে দুর্বলদের কলোনির বাইরের অংশে পাঠিয়ে দেয়। তাতে কলোনির বাহির অংশ থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সহজেই গ্রহন করতে পারে দুর্বল ব্যাকটেরিয়া। শেষমেষ সবল এবং বৃহত ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ওই কলোনির সঙ্গে যুক্ত হয়।

গবেষক দলের প্রধান ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার ড. গুরোল সুয়েল বলেন, ‘আমাদের মস্তিষ্কের নিউরণের মতো ব্যাকটেরিয়া আয়ন চ্যানেল ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের জন্য। বৃহদার্থে ভাবতে গেলে, ব্যাকটেরিয়ার কলোনি আসলে একটি ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। এই আবিষ্কার মানুষকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করবে। বাজারে প্রচলিত অনেক ওষুধ আছে যেগুলো ব্যাকটেরিয়াদের যোগাযোগ স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ব্যাকটেরিয়াদের কলোনি ধ্বংস করে দিতে পারে।

উল্লেখ্য যে, সবাই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন থেকে দূরে থাকতে চায়। আর সেজন্য প্রতিষেধক হিসেবে সেবন করে নানান অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্ত মস্তিস্কে যদি ব্যাকটেরিয়ার সংঘর্ষের ফলে আয়নের সৃষ্টি না হতো তাহলে কথা আদান প্রদানই বন্ধ হয়ে যেত কথাপ্রিয় মানবজাতির।



মন্তব্য চালু নেই