বোল্টের সাফল্যের রহস্য ‘দ্য চ্যাম্পস’

শনিবার ৪x১০০ মিটারে ছেলে এবং মেয়েদের বিভাগে জোড়া সোনা জয়। যার ফলে অ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব মিটে এখনও পর্যন্ত পদক তালিকায় প্রায় ৩০ কোটির দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেল ৩০ লাখি জ্যামাইকা! শীর্ষে থাকা কেনিয়ার পর ৬টি সোনা নিয়ে দ্বিতীয় বোল্ট-শেলি অ্যান ফ্রেজাররা। বোল্টের দেশের এই আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের কারণ কী?

শুধু প্রতিভা? শুধু প্র্যাক্টিস? শুধু নিয়মানুবর্তিতা? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? সাফল্যের রহস্য ফাঁস করতে গিয়ে বোল্ট নিজে মুখে বলছেন, ‘আমাদের দেশে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড স্পোর্টসের মান এতটাই উঁচু তারে বাঁধা যে, আমরা ভালো করতে বাধ্য হই। জ্যামাইকায় ১০০ মিটারের নাগাল পেতে গেলে আপনাকে কম করে ৯.৯ সেকেন্ডে প্রতিটা রেস শেষ করতে হবে। প্রতিযোগীরা খুব প্রতিভাবান। সেখানে আপনাকে টিকে থাকতে গেলে ভালো করতেই হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বোল্টের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে জ্যামাইকার জাতীয় স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপের অবদান। যাকে ‘দ্য চ্যাম্পস’ বলে উল্লেখ করেন জ্যামাইকানরা। ৩০ হাজারের মতো দর্শক প্রতি বছর যে মিট দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি রিচার্ড মুর জামাইকার এই সাফল্য নিয়ে একটি বই লিখেছেন। মুরের কথায়, ‘এর থেকে ভালো স্কুল স্পোর্টস সারা বিশ্বে হয় কি না সন্দেহ। এই মিটের মান অত্যন্ত উন্নতঅ। ছোট থেকে এই মিটের মধ্যে দিয়ে যারা বড় হয়, তারা ভবিষ্যতে যে খুব ভালো করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’

জ্যামাইকাতে স্প্রিন্টাররা বড় তারকা তাদের নাম প্রায়ই উঠে আসে সংবাদমাধ্যমের পাতায়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড়বড় কাটআউট চোখে পড়ে। বাসের পিছনের বিজ্ঞাপনে তাদের ছবি। স্থানীয় সংবাদপত্র ‘জ্যামাইকা গ্লেনার’-এর সাংবাদিক আঁদ্রে লোর কথায়, ‘ফুটবল এ দেশে খুব জনপ্রিয়, কিন্তু ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড স্পোর্টস হল রাজার রাজা ! ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে বোল্টের সাফল্যের পর তো এর জনপ্রিয়তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বোল্ট, আসাফা পাওয়েল এবং ফ্রেজার-প্রাইসের যা জনপ্রিয়তা, তার কাছাকাছি কিছুটা পৌছতে পারেন ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। অন্য কারও কথা মনে হয় না।’

লো-ও মেনে নিচ্ছেন, স্কুল থেকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড স্পোর্টসের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয় বলেই পরবর্তী কালে বোল্টের মতো অ্যাথলেট দেশ পেয়ে থাক। তার কথায়, ‘স্কুল থেকে জামাইকার বেশির ভাগ ছেলে মেয়েই আগে ডন কোয়্যারিকে সামনে রেখে এগোত। এখন ওদের আইডল বোল্ট।’ বোল্ট-ইয়োহান ব্লেক-পাওয়েল এবং ফ্রেজার প্রাইস যার কোচিংয়ে উঠে এসেছেন, সেই গ্লেন মিলস এখন জাতীয় কোচ।

বেইজিংয়ে বিশ্ব মিটের সাফল্য উপভোগ করছেন মিলস। তার কথায়, ‘আমরা পারফেকশন অর্জন করতে চাই। কিন্তু, সেটা খুব কঠিন কাজ। শুধু ক্রীড়াবিদই নয়, আমি ওদের ভালো মানুষ হওয়ার কথা বারবার বলি। ওদের সব সময়ই বলি ট্র্যাকের বাইরেও একটা জীবন রয়েছে। এটা ওদের স্ট্রেসমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।’

শেষ বিচারে যা দাঁড়াল, ভালো কোচিং, নিয়মানুবর্তিতা, প্রতিভার পাশে স্কুল স্তর থেকে লক্ষ্য স্থির রেখে এগোনোর মানসিকতাই বোল্টকে আলাদা করে দিয়েছে। স্কুল স্তর থেকে দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা আসলে বোল্ট-পাওয়েলদের মতো স্প্রিন্টারের ৮০ শতাংশ ভবিষ্যৎ তৈরি করে দেয়। বাকি ২০ শতাংশ কাজটা করে সঠিক পথে পরিশ্রম।



মন্তব্য চালু নেই