বৈশ্বিক সন্ত্রাসের বেশি শিকার মুসলিমরা?

ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকী শার্লি হেবদোর অফিসে হামলার মতো বড় ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব এখন ইসলামপন্থীদের হামলার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক। কিন্তু প্যারিস হত্যাকাণ্ডের পর সেখানকার একজন ইমাম বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্বে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর যারা শিকার হচ্ছেন তাদের ৯৫ শতাংশই মুসলিম।

কিন্তু বিশ্বের বড় সন্ত্রাসী হামলা গুলো যেমন শার্লি হেবদোতে হামলা, লন্ডনে ৭/৭, মাদ্রিদে ট্রেনে হামলা এবং অবশ্যই ৯/১১ এর কথা চিন্তা করলে প্যারিসের ইমাম হাসান শাগউমির এ দাবি হয়তো পশ্চিমাদের অবাকই করবে।

মূলত দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এসব হামলাগুলো করা হয়েছিলো এবং হামলাকারীরা সফলও হয়েছিল। সেখানে আক্রান্তদের বেশিরভাগই মুসলিম ছিল না। তাহলে ৯৫ শতাংশের এ দাবি কতটা সত্যি?

বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে ৯৫% এর এ সংখ্যাটি মূলত মার্কিন সরকারের একটি ডকুমেন্ট থেকে এসেছে, যেটি ছিল তাদের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার ২০১১ সালের রিপোর্ট।

এতে বলা হয়েছে, “যেখানে ধর্ম সংক্রান্ত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা গেছে সেখানে গত পাঁচ বছরে ৮২%-৯৭% সন্ত্রাস সংক্রান্ত মৃত্যুগুলোর মধ্যে মুসলিমরাই ভুক্তভোগী হয়েছে।”

বিষয়টি হলো ধর্মসংক্রান্ত সন্ত্রাস। বৈশ্বিক সন্ত্রাস বা গ্লোবাল টেররিজম নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার তাই আগে দেখতে হবে বেশিরভাগ ঘটনাগুলোর সঙ্গে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি–না।

ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির দি গ্লোবাল টেররিজম ডেটাবেস এখন যুক্তরাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত তথ্যের অফিসিয়াল উৎস। এ ডেটাবেসটির সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে সন্ত্রাসকে সংজ্ঞায়িত করার। পরিকল্পিত, সহিংস ও হুমকি এবং সরকার করছে না এমন ঘটনাগুলো সেখানে স্থান পায়। এতে আরো বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় লক্ষ্য অর্থাৎ শুধু ভিকটিমই নন যার উদ্দেশ্য থাকে আরো বৃহৎ পরিসরে বার্তা দেয়া।

যদিও ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এ বিষয়ক টিমটি মূলত মিডিয়া রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে থাকে এবং তারা প্রায়ই ভিকটিমদের ধর্ম বিষয়ক তথ্য রাখে না। গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারি তবে কিছু গুরুত্ব তথ্য সেখানে পাওয়া যায় যেগুলো অতটা ধর্মের ওপর নয় বরং যতটা ভৌগলিক।

২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাগুলো মধ্যে ৫০% এবং ৬০% মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তিনটি দেশে- ইরাক,আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে।

ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির টীমের প্রধান এরিন মিলার বলেন, “এগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আমরা জানি ৮০ থেকে ৯০% হামলাগুলো ছিল অভ্যন্তরীণ।” যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে হয়েছে সেহেতু মোটামুটিভাবে হামলাকারী ও হামলার শিকার উভয়ই মুসলিম।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত দশ বছরে বৃটেনে চারশ হামলার ঘটনা ঘটেছে যার বেশিরভাগই উত্তর আয়ারল্যান্ডে হয়েছে। এর বেশিরভাগেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩১ টি ঘটনার মধ্যে প্রায় বিশটিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর ফ্রান্সে ৪৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু ইরাকে প্রায় বার হাজার হামলার ঘটনায় আট হাজার ঘটনাতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এরিন মিলার বলছেন, এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় ৯৫% সংখ্যাটি কিছুটা বেশি কিন্তু আনুমানিক সঠিক। -বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই