বৈশাখে কারাগারে ইলিশ-পান্তা : ৮৭ হাজার কয়েদীর জন্য বরাদ্ধ ২৩ লাখ টাকা

এবারের বৈশাখের আনন্দ ছড়িয়ে যাবে রুদ্ধদার কারাগারগুলোতেও। দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি প্রায় ৮৭ হাজার কারাবন্দির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে। তাবে প্রতিজন কয়েদীর জন্য বাড়তি ৩০ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে পহেলা বৈশাখে। বাড়তি টাকা দিয়ে তাদের জন্য বৈশাখের প্রথম দিন ইলিশ মাছ ভাজা ও পান্তা ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। সাথে থাকবে দেশের বাঙালিয়ানা ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, সারাদেশে ১৩টি কেন্দ্রিয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারে কমবেশি ৮৭ হাজার কারাবন্দি রয়েছে। তারা বছরে চার দিন বিশেষ ও উন্নতমানের খাবার পেয়ে থাকে। দুই ঈদে দুইদিন আর ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ এই চারদিন। এবার ধেকে সেই চারদিনের সাথে পহেলা বৈশাখও যোগ হলো।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলির গত ৩ এপ্রিল তার কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতার বিলে সই করে পরে যখন নিজের বিল উপরের কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর জন্য সই করতে যান তখনই তার মনে হল কারাগারের হাজারো বন্দির জন্য কিছু একটা করা যায় কিনা। তখনই তিনি বিষয়টি নিয়ে কারাঅধিদ্প্তরে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত আইজিপি কর্নেল ইকবাল হাসানকে বলেন, স্যার দুই বছর হলো আমরাতো বৈখাশী ভাতা পাচ্ছি। তাহলে এই বন্দিদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। তখনই তিনি তার কথা শুনে এতটি প্রস্তাব তে বলেন। প্রস্তাব পেয়ে কারা অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্নালয়ে পাঠানো হয় বৈখাখে অতিরিক্ত বরাদ্ধের জন্য।

প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগে আসলে তা নোট আকারে সচিবের কাছ পাঠানো হয়। এরই মধ্যে প্রস্তাবটিতে সই করেছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা মিল্টন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে ৭৮ হাজার কারাবন্দির জন্য ৩০ টাকা হারে মোট ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিজনের ন্য ৩০টাকা হারে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু এই অল্প টাকায় কি আপ্যায়ন করা হবে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কালের কণ্ঠকে বলেন, পান্তা ও ইলিশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীতো ইলিশ নিরুৎসাহিত করেছেন, এ বিষয়ে উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আগে থেকেইতো প্রস্তুতি ছিল তাই ইলিশ বাদ দেওয়া যাচ্ছেনা।

জানতে চাইলে আরেক কর্মকর্তা বলেন, কারারক্ষীরাতো স্বাভাবিক জীবনের মানুষ নয়। তারা বিভিন্ন মামলায় বন্দি হয়ে কারাবাস করছেন। তাদের বিষয়ে আমরা বছরেরর বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ আয়োজন করি। এবার সরকারের বরাদ্দ সাপেড়্গ্যে বাঙালিয়ানা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

পহেলা বৈশাখ, বাঙালির সার্বজনীন উত্সব। প্রতিটি বাঙালির কাছে গুরম্নত্বপূর্ণ এই উত্সব। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের এ গেজেট অনুসারে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ বা ২০১৬ ইংরেজী সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এ বছরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মার্চ মাসের বেতনের সাথেই সরকারি চাকরিজীবীরা বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন। আবার মাসিক বেতনের পর আলাদাভাবে অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বাঙালির সার্বজনীন বৈশাখী উত্সব পালনে সরকারী চাকুরী জীবীদের পাশপাশি এবার কারাবন্দিরা যোগ হওয়ায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।

কারা অধিদপ্তর সুত্র জানায়, একজন কয়েদীর জন্য বছরের অন্য সময়ে দৈনিক বরাদ্ধ ৫৭ টাকা আর হাজতির জন্য ৫৩ টাকা। কয়েদীরা আটা পায় দৈনিক ১১৬ গ্রাম আর হাজতীরা ৮৭ গ্রাম। হাজতির চেয়ে কয়েদীদের জন্য বরাদ্দ একটু বেশি। তাদেরকে সকালে রুটি, দুপুরে সবজিভাত রাতে ভাত বা রুটি সাথে মাছ মাংস দেওয়া হয়। তবে পহেলা বৈশাখের দিন তারা সকালে পান্তা ইলিশ , কাচা মরিচ, ভর্তা পাবেন।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বৈশাখী ভাতা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের এ উদ্যোগটি অত্যন্ত ভালো। সরকারি কর্মজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মজীবীদেরও এ বোনাসের আওতায় আনা প্রয়োজন। ’ নইলে সমাজে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। কারাগারে পহেলা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে সাবেক একজন সচিব বলেন, এটা একটি ভাল উদ্যোগ। এতে কারাবন্দিরা কিছুটা হলেও আনন্দ পাবে।



মন্তব্য চালু নেই