বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণার শুরুতেই ছাত্রলীগে দ্বন্দ্ব

সাম্প্রতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসার পর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির দাবি তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতিমধ্যে এ নিয়ে তারা কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এমনকি সোমবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবিরোধী মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানববন্ধনে ছাত্রলীগের সভাপতিকে অংশ নিতে দেখা গেছে।

তবে কমিটি ঘোষণা নিয়ে শুরুতেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডি থানা এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা ছাত্রলীগ।

ঘোষণার পরপরই থানা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির রহমান জয়। তার দাবি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি অনুমোদনের এখতিয়ার শুধু তাদেরই।

কমিটি অনুমোদনের পর তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় অন্তর্গত সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেবার সাংবিধানিক অধিকার শুধুমাত্র সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখারই আছে। আর কারও যদি সহযোগিতা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে পরামর্শ দেবেন। কেউ যদি সংগঠনের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কমিটি দেয় বা দেবার অপচেষ্টা করে, সেটা হবে অবৈধ কমিটি বা ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের বহিপ্রকাশ মাত্র।

ইতিমধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দেয়া হয়েছে, তা বিলুপ্ত বা অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

তবে ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এস আশফাক এ ব্যাপারে বলেছেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি দেয়ার এখতিয়ার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগেরই। কিন্তু বর্তমান সময়ে জঙ্গি সমস্যার কারণেই সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কারণ আগস্ট মাসে আমাদের কোনো কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় না। তাই ২৭ জুলাই আমরা কমিটির অনুমোদন দিয়েছি। আর গতকাল (রোববার) বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি।

এই দ্বন্দ্বের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বিষয়টি আমরা সাংগঠনিকভাবে সমাধান করছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সুজাউদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক এস এস আশফাক ধানমন্ডিতে অবস্থিত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন।

এর আগে এদিকে ধানমন্ডির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটির গঠনের বিষয়ে ছাত্রদলের ১নং সহ-সভাপতি এজমুল হোসেন পাইলট বাংলামেইলকে জানান, মূলত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রাজনীতির প্রয়োজন আছে। তবে ছাত্রলীগের তড়িঘড়ি করে কমিটি দেয়ার বিষয়টি অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এসব কমিটিতে যদি কোন জঙ্গি ঢুকে পড়ে তাহলে তা পরবর্তীতে সাংগঠনিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ হতে পারে না।

তবে ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দাবি, কমিটির অনুমোদন তড়িঘড়ি করে দেয়া হলেও যাদের কমিটিতে নেয়া হয়েছে তারা অনেক আগে থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা বঙ্গবন্ধু আদর্শ ধারন করে থাকেন। অামরা সকলের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে যাচাই বাছাই করে কমিটির অনুমোদন দিয়েছি। সুতরাং এখানে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টার কোন সুযোগ নেই।

গত ১৭ জুলাই রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও মালিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সরকারের এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত, আসলে কি রাজনীতিমুক্ত? সরব রাজনীতি নেই, সেখানে নীরব রাজনীতি আছে। আর নীরব রাজনীতি মানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহ্‌রীরের সংগঠন আছে। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই সরব রাজনীতি থাকতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই