বেরোবি’র শিক্ষার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে রবিবার তালা ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারির বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রায় ৫ মাসের আন্দোলনে স্থিমিত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের সর্ব্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ ।টানা ৪৮ দিনের মতো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে(বেরোবি)হল,ক্যাফেটেরিয়া, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ সহ ৪ দফা দাবিতে চলছে ছাত্রদের একাংশের অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট। সেশনজোটে শংকিত হয়ে পড়েছে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন।

এমতাবস্থায় শিক্ষার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম রনি স্বাক্ষরিত রংপুর জেলা বিশেষ শাখার পুলিস সুপার বরাবর লিখিত এক আবেদন পত্রে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে তাঁর সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার আগামীকাল তালা ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সহকারি প্রক্টর মোঃ শাহিনুর রহমান।চলমান সংকট নিরসন না করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা ভাঙার বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃংখলা বাহিনী জোরদার করা হয়েছে।তবে আন্দোলনকারিরা তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত দৃঢ় রেখেছেন।

শনিবার বিকেল ৪টায় অবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে রংপুর বাসীর পক্ষে কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক মোজাহার আলীর নেতৃত্বে পার্কের মোড় থেকে একটি মিছিল বের হয়ে চকবাজার দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের গেটে যায়। পরে অধ্যাপক মোজাহার আলী এবং জাতীয় পর্টির সাবেক চেয়ারম্যান এবং মহানগর জেলা আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান দাবি দুটি নিয়ে উপাচার্যের নিকট গেলে তিনি এ ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বাস দিলে তাঁরা চলে আসে। এছাড়াও ঐ একই দাবিতে রাত ৮টায় পার্কের মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামিলীগের ২৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থ সংরক্ষণ সহায়ক পরিষদ’।

শনিবার জেলা বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে দেওয়া পত্রে জানানো হয়,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ,রংপুর এর শিক্ষক সমিতি কর্তৃক অযৌক্তিক আন্দোলনের কারনে প্রায় ৪ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে প্রশাসনিক ভবন ও ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে একাডেমিক ভবনে তারা তালা লাগিয়ে দেয়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে সেই সাথে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় সম্ভব হয়নি।

শিক্ষক সমিতির সাথে উপাচার্য মহোদয়ের কয়েক দফা আলোচনা হলেও শিক্ষক সমিতি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিতে সম্মত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছে। এই রুলের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মার্চ ২০১৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান এর সভাপতিত্বে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা চালু রাখার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

হাইকোর্টের রুলিং ও ইউজিসির(বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) সিদ্ধান্ত জানিয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিক্ষক সমিতিকে ২০১৫ সালের ১৮ মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যারয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালাগুলো খুলে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক সমিতি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

ঐ পত্রে আরো জানানো হয়,দীর্ঘদিন আন্দোলনে ক্যাম্পাস অচলাবস্থার পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়েরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু সহ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা ভেঙে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

ঐ পত্রে ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখ থেকে পরবর্তী পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের আশে পাশে এলাকায় আইনশৃংখলা তথা নিরাপত্তা জোরদার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সুপারকে সহযেগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান উপাচার্য।
প্রশাসনের উক্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির ফরিদ উল ইসলাম জানান, তালা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সাথে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।পদত্যাগপত্র

উত্তোলন করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্য ১৮ মার্চ শিক্ষক সমিতিকে চিঠি দিয়েছিলেন।আগামী ২৫ মার্চ শিক্ষক সমিতির সাধারণ বৈঠক রয়েছে। সে বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আমরা আমাদের পদত্যাগপত্র উঠিয়ে নিব কি না। প্রশাসন কর্তৃক তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন,শিক্ষক সমিতির দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হয়নি।অথচ এ রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।এটা ভাববার বিষয়।

উল্লেখ্য যে,শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র বর্ম্মণ এর নেতৃত্বে গত ১৮ তারিখ রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে চলমান সংকট নিয়ে কথা বলতে গেছেন ৫-৬ জনের একটি দল।

এ দিকে আগামীকাল অস্বাভাবক পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটগুলোতে বিশেষ নজরদারির ব্যাবস্থার কথা জানা গেছে।অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃংখলা বাহিনির সহোযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই