বেরোবির ফটক বন্ধ, অজুহাত নিরাপত্তা, ক্ষোভ প্রকাশ বিভিন্ন মহলের

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘদিন থেকে এক নং ফটক বন্ধ করে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।এ দিকে ব্যবসায়িরাও পড়েছেন কঠিন বিপদে।লাটে উঠেছে তাদের ব্যবসা।

নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ফটকটি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মীর তামান্না ছিদ্দিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে কী ধরণের নিরাপত্তা সেটার ব্যাপারে কিছু বলেনি প্রশাসন।

ফটকটি বন্ধ থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, একটা ঘটনা ঘটেছে অনেক দিন হলো। এর অজুহাতে ফকটটি বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এটা চরম দু:খজনক।তিনি আরো বলেন, যাদের (এলাকাবাসির) সাথে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো এবং সেটার সমাধানও হয়েছে। সুতরাং এখন গেট বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতাই না। এটা উপাচার্যের একক সিদ্ধান্ত এবং একাডেমিক কাউন্সিলেও কোনো আলোচনা হয়নি গেটটি বন্ধ । সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান বলেন, অতি দ্রুত ফটকটি খুলে দেওয়া উচিৎ।যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট নিরসন করার দাবি জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই হবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে।যদি নিরাপত্তার কথা বলা হয় তাহলে গেটটিতে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা উচিৎ। নিরাপত্তার অজুহাতে গেট বন্ধ রাখা উচিৎ নয়।

কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, এটা দ্রুত খুলে দেওয়া দরকার।এটা আমরা চাই।শিক্ষার্থী এবং আমাদের ঘুরে যেতে হয় অনেক দূর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন গেটটি বন্ধ রেখেছে। হয়তো এটার পেছনে হয়তো উপাচার্যের কোনো দুরভিসিন্ধু রয়েছে।আমরা অতিদ্রুত খুলে দেওয়া দাবি জানাই গেটটি।

এর আগে গত চার মার্চ ছাত্রলীগ-স্থানীয় ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নং ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।ফটকটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে শিক্ষার্থীরা।সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় ২২ ও ২৩ মার্চ সংবাদ প্রকাশিত হলে নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে ২৩ মার্চ ফটকটির ছোট গেটটি খুলে দেয়।গত ২৭ মার্চ পুরো ফটকটি শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা রাখার কথা থাকলেও বন্ধ করে দেওয়া হয় ছোট গেটটিও।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, প্রক্টর ও উপাচার্যের নির্দেশে ফটকটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রক্টর মীর তামান্না ছিদ্দিকা বলেন, নিরাপত্তার সার্থে গেটটি বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি।

বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, গত চার মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দোকন ভাঙচুরের অভিযোগে স্থানীয় পার্কের মোড়স্থ ব্যবসায়ীদের সাথে টানা চার ঘন্টার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ভাঙচুর করে। সেই সংঘর্ষের সময় হতে বন্ধ করে রাখা হয় গেটটি। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে তা খুলে দেওয়া হয়নি এখনো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভ্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেকদিন হলো গেটটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেক দূর ঘুরে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়। অনেক সময় লাগে ঘুরে আসতে। তেমন কোন নিরাপত্তার অজুহাতও দেখি না। দ্রুত গেটটি খুলে দেয়া দরকার।’ ফটক বন্ধ থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে তুলকালাম উঠেছে।

এদিকে এই গেটের পাশে অবস্থানরত ব্যবসায়ীরা জানান, ‘গেটটি বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীরা এগেট দিয়ে তেমন পারাপার হচ্ছে না। কাজেই আমাদেরও ব্যবসা হচ্ছে না। হয়ত গেটটি খুলে দেওয়া থাকলে আমাদের ব্যবসা ভালো হতো।’ ’

এ বিষয়ে কয়েকদফায় উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবীকে কল করলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।



মন্তব্য চালু নেই