বেরোবিতে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রক্টরের অপসারণ দাবি : মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যালয়ে (বেরোবি) দীপুকে মিথ্যা অভিযোগে আটকিয়ে রাখার প্রতিবাদে বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) মীর তামান্না সিদ্দীকার অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা । আজ সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ মানববন্ধন-সমাবেশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে অন্যান্য বিভাগের সাধারন শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহন করেন।

মিছিল শেষে উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী ও রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বরাবর আগামীকালের ( মঙ্গলবারের )মধ্যে প্রক্টরের অপসারণ চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব হলো সাধারন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া। সেখানে প্রক্টরের কাছেই যদি সাধারন শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে আমরা সাধারন শিক্ষার্থীরা কার কাছে নিরাপত্তা চাইব। যেখানে প্রক্টরের কাছে আমাদের অভিযোগ দেয়ার কথা ছিলো সেখানে প্রক্টরের বিরুদ্ধেই আমাদেরকে অভিযোগ করতে হচ্ছে। বিশ্বদ্যালয়ের রক্ষক (প্রক্টর) এখন ভক্ষক হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা তার বক্তব্যে বলেন, কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ ছাড়াই শুধুমাত্র প্রক্টরের মৌখিক নির্দেশে কেন দীপুকে ৫ ঘন্টা ধরে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক করে রাখা হলো আমরা এর জবাব চাই। উনি একজন প্রক্টর হয়েছেন বলে তার ইচ্ছামত যাকে খুশি তাকে আটক করে শাস্তি দিবেন কেন? দীপু যদি তাকে কোন ভাবে টিজ (উত্যক্ত) করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যাবস্থা না নিয়ে তাকে আটক করে রাখা হলো। যিনি শিক্ষার্থীদেরকে যখন তখন মামলা দেয়ার হুমকি দেয় তিনি কখনো আমাদের বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টর হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না বলেও মানববন্ধনে ঐ শিক্ষার্থী বলেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম বলেন, একজন বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টর শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে কোন আইনে একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন এবং অন্ধকার রুমে পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখেন? কিভাবে তিনি একজন প্রক্টর হয়ে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সব ধরনের মামলা দেয়ার হুমকি দেন?

এদিকে দীপুর বন্ধু মেহেদী বলেন,“দীপু তার বাবার লাশ সামনে রেখে আমাদের বলেছে যে, সে প্রক্টর ম্যামের সাথে কোন ধরনের বেয়াদবি করেনি । কাজেই তার বিরুদ্ধে প্রক্টর যা করেছেন তা সম্পূর্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অন্যায়।

বিভাগটির শিক্ষার্থী মারুফ ভূঁইয়া বলেন, দীপুকে আটকের খবর পেয়ে তার বাবার করুন মৃত্যু হয়েছে। দীপুর বাবা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন। তার বাবার মৃত্যুর পর এখন কে দীপুর বিশ্বদ্যালয়ে পড়াশুনার খরচ চালাবে?

বিষয়টি নিয়ে আজ দুপুরে প্রক্টরকে কল করলে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।তবে গত শুক্রবার (পয়লা বৈশাখে) তাঁকে টীজ করা হয়েছিলো বলে মুঠোফোনে অভিযোগ করেছিলেন প্রক্টর মীর তামান্না ছিদ্দীকা।

বিভাগের প্রধান ড. মো: নজরুল ইসলাম বলেন, তাকে পুলিশ ফাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সত্যি। ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের মামলারও হুমকি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু মামলা দেওয়া হয়নি। তবে তার বাবা মারা যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীটিকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য সচিব ও গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, “ লিখিত অভিযোগ ছাড়াই যদি তাকে আটক করানো হয় তবে তা ঠিক হয়নি।আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক বলেন, ‘যদি দীপুর আটকের খবর পেয়ে তার বাবা মারা যেয়ে থাকে তবে সেটি অমানবিক এবং এ ব্যাপারে বলবার ভাষা আমার নাই। এটি নিয়ে প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিৎ। তিনি আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে এভাবে আটক করা অন্যায়।’

উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী দীপু ও তার বন্ধুরা ক্যাম্পাসে ঢোকার পর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে প্রক্টরের সাথে দেখা হয়। এ সময় দীপু প্রক্টরকে টীজ করেছে বলে অভিযোগ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে পাঁচ ঘন্টার মতো সময় আটকে রাখা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুলে থাকা সকল মামলাসহ ইভটিজিংয়ের মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।সে আটককালীন হার্ট আ্যাটাকে তার বাবার মৃত্যু হলে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়



মন্তব্য চালু নেই