বেড়ানোর নতুন জায়গাগুলো কতটা নিরাপদ?

দেশে বেশকিছু নতুন পর্যটনস্থলে লোকের বেড়াতে যাবার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলেও নিরাপত্তাব্যবস্থাবিহীন এসব জায়গায় গিয়ে নানা রকম দুর্ঘটিনায় মৃত্যুর খবর ইদানীং প্রায়ই শোনা যাচ্ছে।

পার্বত্য জেলা বান্দরবারে একটি ঝর্ণায় গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া একজন অধ্যাপকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে রবিবার।কয়েকজন বন্ধুবান্ধবসহ সপরিবারে ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে সিলেটের বিছানাকান্দিতে ডুবে মারা গেছেন দুজন ছাত্র।

পর্যটন খাতে জড়িতরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ পর্যটক বেশ বাড়ছে, আর বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু খরস্রোতা ঝরণা বা জলপ্রপাত, পাহাড়ে ট্রেকিং – এগুলো হয়ে উঠছে নতুন আকর্ষণ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, নতুন এসব জায়গায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে?

কথা হচ্ছিল ঢাকার ফারহানা আলমের সাথে – যিনি বেড়াতে খুব পছন্দ করেন। দেশের ভেতরে প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেমন বেড়াতে যান তেমনি খুব একটা বিখ্যাত নয় – এমন জায়গাতেও ঘুরে আসেন মাঝে মাঝে।

তিনি বলছেন, তার অভিজ্ঞতায় পর্যটকদের নিরাপত্তা বাংলাদেশে প্রায় পুরোটাই চলে নিজের উপরেই।

তিনি বলছেন, ‘ধরুন কক্সবাজার বাংলাদেশে পুরনো পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু নতুন কিছু জায়গা যেমন বিছানাকান্দি বা রাতারগুল এরকম নতুন এলাকায় কোথায় গেলে নৌকা আটকে যাবে, কোথায় গভীরতা ও স্রোত কেমন বা পানিতে নামা উচিত না তেমন কোনো সতর্কবার্তা বা গাইডলাইন থাকে না। যার ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।’

এরকম দুর্ঘটনার মুখেই বান্দরবানে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বগুড়ার অধ্যাপক তৌফিক সিদ্দিকী। বান্দরবানের রুমায় একটি পাহাড়ি ঝর্ণায় গোসল করতে নেমে আর ফিরে আসেননি।

ফারহানা আলম বলছেন, পর্যটকদের নিজেদের মধ্যেও রয়েছে বোঝার ঘাটতি। তার মতে, “পর্যটকদেরও উচিত নিয়মকানুন বা কোথায় কি মেনে চলতে হেবে তা যেনে যাওয়া।”

পর্যটন খাতে জড়িতরা বলছেন বাংলাদেশে প্রতিবছর আভ্যন্তরীন পর্যটক বেশ বাড়ছে। নানান জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে থাকার হোটেলগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে গত ছয়মাসে হবে লাখের মতো পর্যটক জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে গেছেন।

টুর অপারেটর কোম্পানি বেঙ্গল টুরস এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম বলছেন, বিশ্বের সব দেশেই পর্যটকদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে অথবা নানা অপরাধ থেকে তাদের নিরাপদে রাখতে রয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রিয় গন্তব্য ছাড়া এমন ব্যবস্থার ঘাটতি যথেষ্টই রয়েছে।

তার মতে, “এই দায়িত্ব সরকারের, টুর অপারেটরদের আবার যাদের রেজর্ট, হোটেল বা পার্ক রয়েছে তাদেরও। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে। দেখা যাবে অনেক যায়গায় সতর্কতামুলক সাইন নেই, অথবা হয়ত ছিল কিন্তু সেটা নষ্ট হয়ে গেছে এবং নতুন করে বসানো হয়নি। ”

বাংলাদেশে পর্যটকদের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় গন্তব্য কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। এর বাইরে রয়েছে সুন্দরবন। রয়েছে সিলেটে চা বাগান আর হাওড় অঞ্চল। দেশের উত্তরাঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা কম বলছেন এই খাতে জড়িতরা।

তবে ইদানীং পর্যটকরা খুঁজে বের করতে শুরু করেছেন নতুন সব গন্তব্য। গড়ে উঠছে পর্যটকদের ক্লাব। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান খান কবির বলছেন, সবচাইতে জনপ্রিয় কক্সবাজারে জোয়ার ভাটা বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। নিয়মিত মাইকেও ঘোষণা দেয়া হয়। তবে যেসব এলাকা নতুন পর্যটন এলাকা গড়ে উঠছে সেখানে ট্যুরিজম বোর্ডের পরিকল্পনা স্থানীয় কমিউনিটিতেই গাইড গড়ে তোলা।

আক্তারুজ্জামান খান বলছেন, ‘স্থানীয়রাই প্রশিক্ষণ পাবেন টুরিস্টদের সহায়তার করার জন্যে। আমরা গাইডদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করবো এবং লিস্ট যাতে টুরিস্টদের কাছে সহজে পৌছায় সে চিন্তা আমাদের আছে। টুরিস্টরা যেন তাদের সহায়তায় নিরাপদে থাকেন সেটিই আপাতত আমাদের পরিকল্পনা।’

অন্যদিকে বাংলাদেশে বেশ কবছর হলো পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। টুর অপারেটর কোম্পানিগুলো বড় কোনো দলের নিরাপত্তায় প্রায়ই তাদের সহায়তা নিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের কাজের গণ্ডি মূলত কক্সবাজারকে ঘিরেই। -বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই