বৃষ্টি কামনায় গাইবান্ধায় ব্যাঙের বিয়ে

প্রচণ্ড গরম আর রোদের খরতাপে অতিষ্ট জনজীবন। চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখের মাঝামাঝি সময়েও দেখা নেই বৃষ্টির।

আর কাঙ্খিত বৃষ্টির আশায় পূর্বপুরুষের কাছে শোনা গল্প অনুযায়ী গাইবান্ধায় আয়োজন করা হয় ব্যাঙের বিয়ের। দিনভর নেচে গেয়ে আনন্দ ফূর্তি করে ‘আল্লাহ মেঘ দে… পানি দে… ছায়া দেরে তুই’ গানের মধ্য দিয়ে হয়ে গেল ব্যাঙের বিয়ের এই আয়োজন।

গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গোপালপুর গ্রামে শুক্রবার বিকেলে এই আয়োজন করা হয়।

মুলত শিশুরাই এই আয়োজনের উদ্যোক্তা। তবে বড়রাও পিছিয়ে থাকেনি। আয়োজনকারীদের অন্যতম রোকসানা মুন্নি জানান, বড়দের কাছে শোনা গল্প অনুযায়ী তারা বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোগ নেন।

বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই হলুদ শাড়ী পরে সেজে গুজে পাড়ার কিশোর কিশোরীরা অংশ নেয় এই আয়োজনে।

অপর আয়োজক নিলুফার তিন্নি বলেন, বাড়ীর পাশের ডোবা থেকে ব্যাঙা-ব্যাঙি সংগ্রহ করা হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে পাত্র-পাত্রীকে সাজানোও হয়েছে রঙচঙ মাখিয়ে। অনেকটা হিন্দু বিয়ের আদলে কলাগাছ ও শাড়ী দিয়ে বিয়ের আসর তৈরি করা হয়েছে। চালন ও কুলো রঙিন করে সাজানো হয়েছে। বিয়ের প্রস্ততি সেরে তাদের সাজ-সজ্জা শুরু করতে করতে প্রায় মধ্য দুপুর।

রঙিন ঝলমলে শাড়ী পড়ে ব্যাঙা-ব্যাঙিকে সাথে নিয়ে ওই গ্রামের মোজাম্মেল মিয়ার উঠোনে হাজির দু-পক্ষ। বিয়ের আসরে ব্যাঙা-ব্যাঙিকে রেখে শুরু হলো বিয়ের আয়োজন। প্রথমে বিয়ের গীতের প্রতিযোগীতা। সাথে নাচ। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বড়রাও মজা পেয়ে অবশেষে এতে যোগ দেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা নাচ-গান ও বর কনে পক্ষের তর্ক-বিতর্ক শেষে ব্যাঙা ব্যাঙির দু-পা এক খানে করে বেঁধে দেওয়া হলো কলা গাছের সঙ্গে। তাদেরকে ঘিরে গীত গাইতে গাইতে কুলা চালন নিয়ে বেশ কয়েকপাক ঘোরে উভয় পক্ষ। অবশেষ সময় হলো তাদের জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার। এভাবেই শেষ হলো ব্যাঙা ব্যাঙির বিয়ে।

বিজ্ঞান যাই বলুক হাজার বছরের বিশ্বাসের এই আয়োজন এখন আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ। গ্রামাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর ধারণা এর ফলে সৃষ্টিকর্তার করুণার ছোঁয়া মিলবেই।



মন্তব্য চালু নেই