বৃদ্ধ মাকে রেখে একই পরিবারের ৭ জন নিখোঁজ

গেল এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ রয়েছে সংখ্যালঘু দুই পরিবারের আট সদস্য। এর মধ্যে একই পরিবারের সাত সদস্য রয়েছে। তারা তাদের বৃদ্ধ মাকে রেখে নিখোঁজ হন। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অজানা আতঙ্ক।

রংপুর সদর উপজেলার সদ্য পুস্করনী ইউনিয়নের ভুরাঘাট ফতেপুর গ্রামে ওই পরিবার দুটির বসবাস। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনও নিশ্চিত করে কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর দর্শনা এলাকার পার্শ্ববর্তী ফতেপুর গ্রামের মৃত সহদর মদকের ছেলে শংকর মদক (৪৫) ও পরী মদক (৩৮)। পেশায় রাজমিস্ত্রী শংকর স্ত্রী জলেশ্বরী, ছেলে দীপ্ত (১৫) ও দিপুকে (১২) নিয়ে ১৮ শতক জমির ওপর পৈত্রিক বাড়িতে বসবাস করতেন। একই বাড়িতে ছোটভাই গ্যারেজের মিস্ত্রী পরী মদকের স্ত্রী সরস্বতী, তিন বছরের ছেলে অপুকে নিয়ে বসবাস করতেন। তারা জন্ম সূত্রে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন।

গত ২৭ জুলাই সকালে এই পরিবারের সাত সদস্যসহ নিখোঁজ হয়ে যায়। বাড়িতে শুধু রয়েছে সত্তর বছর বয়সী মা যমুনা রানী।

কান্না জড়িত কণ্ঠে মা যমুনা রানী জানান, গত বুধবার সকালে শংকর ও পরী কাজে যায়। তারপর কখন যে ছেলের বৌয়েরা তাদের ছেলেদেরসহ নিখোঁজ হন তিনি তা জানেন না। শংকরের বড় ছেলে দীপ্ত ভুরারঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

ভারতে চলে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে যমুনা রানী বলেন, ‘ভারতে আমাদের কেউ নেই। ভারত যাওয়ার মতো টাকা-পয়সাও নেই।’

তিনি আরও জানান, তার ছোট ছেলে তৈলক্ষ্য ১৫ বছর আগে নিখোঁজ হন। তখন তার বয়স ছিল সাত বছর। যমুনা রানী আশঙ্কা করছেন তার পরিবারের লোকজনকে কেউ অপহরণ করে হত্যা করতে পারে।

এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ, কাকে নিয়ে থানায় যাব, কাকে নিয়ে অভিযোগ করবো, আমিতো কিছু জানি না। আমার তো কেউ নেই।’

শংকরের প্রতিবেশী কর্নধার বর্মন জানান, ওরা খুবই দরিদ্র পরিবার। ওদের কোনো শত্রু নেই। কেনো ওরা নিখোঁজ হলো এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

শংকর ও পরীর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শংকর ও পরীর শ্বশুর বাড়ি মিঠাপুকুরেও খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে, তারা সেখানে নেই। এছাড়া আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নেয়া হয়েছে। ওদের নিখোঁজের ঘটনায় আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি।

এদিকে শংকরদের প্রতিবেশী ধীরেন চন্দ্রের ছেলে সজল ওরফে সবুজ নিখোঁজ হয়েছে গত মঙ্গলবার ২৬ জুলাই সকালে। সজল ভুরারঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

সজলের বাবা জানান, শংকরের ছেলে দীপ্তের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তো সজল। মঙ্গলবার সকালে শুধু একটি ট্রাউজার পড়ে খালি হাতে বের হয় সজল। সঙ্গে কোনো টাকা পয়সাও নিয়ে যায়নি। সে তার মোবাইলফোনটি রেখে গেছে।

তিনি ধারণা করছেন কেউ সজলকে অপহরণ করেছে। তিনি এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন।

এদিকে এই দুই পরিবারের আট সদস্য নিখোঁজ হওয়ায় স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সদ্য পুস্করনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা জানান, ওদের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্তের জন্য ইউনিয়ন সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, শংকরের পরিবার কেউ এখনো অভিযোগ করেন নি। তবে সজলের বিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই