বৃদ্ধ পরিবেশকর্মীর ওপর পুলিশের এ কেমন আচরণ!

শুভ্র দাড়ি, চোখে চশমা, কপাল থেকে মাথার তালু পর‌্যন্ত চুল নেই। সাদা টিশার্ট পরা বয়স্ক এই মানুষটিকে ঘিরে আছে কয়েকজন উন্মত্ত পুলিশ সদস্য। তার ছেঁড়া টিশার্ট ধরে তাকে মাটিতে হিঁচড়ে টেনে নিচ্ছে একজন পুলিশ। আর একজন তার ডান পাটি টেনে ধরে আছে। চোখ জুড়ে আতঙ্কিত মানুষটি দুই হাতে তার নিম্নাংশ রক্ষার চেষ্টা করছেন, কিংবা হয়তো সেখানে আগেই আঘাত করা হয়েছে, আর কোনো আঘাত থেকে রক্ষার চেষ্টা তার।

এই ছবিটি রাজধানীর শাহবাগ থেকে তোলা। বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবিতে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বৃহস্পতিবারের আধাবেলা হরতালের সময় পিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন মিজানুর রহমান নামের এই পরিবেশকর্মী। সেখানে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের একপর‌্যায়ে আক্রমণের শিকার হন তিনি।

তাকে পুলিশের মারধর ও চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আর সমালোচনার ঝড় ওঠে পুলিশের এই আচরণ নিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, মিজানুর রহমানকে মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে লাথি মারছে পুলিশ। আরেকটি ছবিতে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্য একটি ছবিতে দুজন পুলিশ মিজানুরকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছেন।

রামপালবিরোধী আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, পুলিশ ওই পরিবেশবাদী কর্মীকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আবার মারধর করে। পরে গুরুতর আহত মিজানুরকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হলে সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়নি। পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এখন তিনি কেমন আছেন, তা জানেন না তারা।

সাংবাদিক আকবর হোসেন নিজের ফেসবুক পাতায় মিজানুর রহমানকে চ্যাংদোলা করে পুলিশের নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেন। এর কমেন্ট বক্সে রিপণ লিপু নামের একজন লেখেন- ‘এই লজ্জা রাখি কোথায়! ধিক ধিক ধিক!’

তানবীর সিদ্দিকী নামে একজন লেখেন, ‘পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ উপহার।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক বলেন, ‘মিজানুর রহমান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন করছেন তিনি। কিন্তু পুলিশ তার ওপর অমানবিক আচরণ করেছে। পরে তাকে থানায় নিয়েও মারধর কো হয়েছে। আমরা পুলিশের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি করেন, মিজানুর রহমানের আচরণ ভালো ছিল না। তার আচরণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

ওসি বলেন, ‘মিজানুর রহমানকে যেভাবে পুলিশ সদস্যরা ধরে এনেছে, আপনি (এই প্রতিবেদক) সেই ছবি দেখেছেন। কিন্তু ওনাকে (মিজানুর) ধরার আগে উনি কী করেছেন সেই ছবিও আমার কাছে আছে। আপনি কষ্ট করে একটু থানায় এসে দেখে যান। ওনাকে ধরার আগে উনি যে আচরণ করেছেন, এতে পুলিশ তাকে ধরার জন্য যা করা প্রয়োজন তা-ই করেছে।’



মন্তব্য চালু নেই