বুশ যুগ ফিরিয়ে আনার ট্রম্পপরিকল্পনা ফাঁস

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক নিরাপত্তা পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। হাতে পাওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের এক গোপন নথির বরাত দিয়ে তারা বুশ যুগে চালু থাকা সিআইএর ভয়াবহ গোপন বন্দিশালা এবং কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রশাসনের এসংক্রান্ত গোপন নথি হাতে পাওয়ার পর তাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এসব কথা জানিয়েছে। কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে বুশ প্রশাসন গোপন এসব বন্দিশালা আর কথিত জিজ্ঞাসাবাদের নামে ঘৃণ্য নিপীড়নমূলক নির্যাতনব্যবস্থা চালু করে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব গ্রহণের পর এক নির্বাহী আদেশে জিজ্ঞাসাবাদের এসব প্রক্রিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ট্রাম্প সেই বুশ যুগকেই ফেরাতে চাইছেন। ওবামার নিষেধাজ্ঞায় নির্বাহী আদেশে স্থগিতাদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩ পৃষ্ঠার নথি “শত্রু’ পক্ষের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ’ (ডিটেনশন অ্যান্ড ইন্টারোগেশন অব এনিমি কমবেট্যান্টস) হাতে পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। ওই নথির ভিত্তিতে বলছে, বুশ যুগে চালু থাকা সিআইএর গোপন কারাগারব্যবস্থা বা ব্লাকসাইট প্রিজনগুলো আবারও চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। অবশ্য এ নথিতে শিগগির কোনো গোপন কারাগার খোলা অথবা নিপীড়নের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তবে এ দুই ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের নীতি বিশ্লেষণ করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই নথিতে।

নিউইয়র্ক টাইমস প্রাপ্ত নথির বরাতে বলছে, নির্বাহী আদেশে স্থগিতকৃত ব্লাক সাইট কারাগার ব্যবস্থা আবারও ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইতিহাসের সব থেকে বিতর্কিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই এ ধরনের কারাগার ফিরিয়ে আনার ইশারা দিয়েছিলেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, বন্দি নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্রমেই কুখ্যাত হয়ে ওঠা এক ব্ল্যাক সাইট প্রিজন গুয়ানতানামো বে সম্ভবত সহসাই বন্ধ হচ্ছে না। ট্রাম্প এটি চালু রাখার আভাস দিয়েছেন।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই কারাগারটি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিপরীতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে ‘খারাপ’ মানুষদের বন্দি রাখতে এ কারাগারটি চালু রাখার আভাস দেন। তবে বিদায়ী ওবামা প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক শেষ বন্দিদের অন্যত্র স্থানান্তরের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সবাইকে মুক্ত করতে পারেননি তিনি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসের সামনে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে ওবামা বলেন, গুয়ানতানামো বন্দিশিবিরটি মার্কিন আদর্শের বিপক্ষেই যায়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কাজেই আসেনি এ কারাগার। অতএব এটি বন্ধ করাই সঠিক কাজ হবে। সেখানে তখনো ৯১ জন বন্দি ছিলেন। এর পর দুই ধাপে বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এখন সেখানে বন্দির সংখ্যা ৫৯ জন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি দেয়া হয় চার ইয়েমেনি বন্দিকে। বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ জনে। সর্বশেষ জানুয়ারির মাঝামাঝি ১০ বন্দি স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে সেখানে অবশিষ্ট বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ জনে।

নিউইয়র্ক টাইমসে ফাঁস হওয়া নথির বরাতে আরও জানা যায়, কেবল ওইসব গোপন কারাগারই নয়; ফিরছে বুশ আমলের কুখ্যাত সব নিপীড়নমূলক জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলগুলোও। বুশ শাসনামলে চালু থাকা বন্দিদের সঙ্গের আচরণ ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়াকে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। টাইমস ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নথির বরাতে বলছে, আরোপিত কঠোরতা বাতিল করে বুশ যুগের জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে ওয়াটারবোর্ডিং প্রক্রিয়া অন্যতম।

নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ওয়াটারবোর্ডিংসহ জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের বেশ কয়েকটি পদ্ধতি ফিরিয়ে আনবেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে বোমা হামলার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, জঙ্গিরা আরও হামলা করলে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের চেয়ে নিষ্ঠুর পদ্ধতি চালু করবেন। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করতেই হবে আমাদের।

মার্কিন কারাগারগুলোতে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা রেডক্রসকে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল ওবামা সরকার। প্রাপ্ত নথির বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এই প্রবেশাধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে পারেন ট্রাম্প। এর ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, উল্লিখিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে জেনেভা চুক্তি ভঙ্গ করে সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাবস্থার বাইরে অন্য কোনো সময়ে গোপন কারাগার খোলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।



মন্তব্য চালু নেই