বীর্য বিক্রি করেই এই গরু আয় করে ৫ কোটি টাকা!

নাম শুনে হয়তো ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় যুবরাজ সিংয়ের কথা মনে হতে পারে। কিন্তু এই কোটিপতি যুবরাজ ক্রিকেটার নয়! বরং উন্নত প্রজাতির এক ষাঁড়, যার শুক্রাণু বিক্রি করে মালিক প্রতিবছর ৪০-৪৫ লাখ রূপি রোজগার করেন। আর এই ষাঁড়কে নিয়ে সম্প্রতি ভারতজুড়ে চলছে মাতামাতি।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত কৃষি উন্নতি মেলায় যুবরাজ নামের এই ষাঁড় ছিল সকল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কৃষি মেলায় মুরাহ প্রজাতির উন্নতজাতের এই ষাঁড়কে দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষক ও গরুর খামার মালিকদের ভিড় ছিল দেখার মতো। আর ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার যুবরাজ নামের এই হৃষ্টপুষ্ট ষাঁড় ওই প্রতিযোগিতা থেকে দেশের সেরা গবাদিপশুর স্বীকৃতি নিয়ে ফিরেছে।

কৃষি মেলায় যুবরাজের মালিক করমবীর সিং সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত নয় বছর ধরে ভারতে গরুর জাত উন্নয়নে যুবরাজের অবদান আছে। কারণ এতগুলো বছর ধরেই ‘শুক্রাণু দান’ করে চলছে যুবরাজ। আর যুবরাজের ‘সিমেন’ বা শুক্রাণুর সাহায্যে মুরাহ প্রজাতির গাভি ও স্ত্রী-মহিষকে কৃত্রিমভাবে নিষিক্ত করা যায়। আর তাতে বাচ্চা হলে সেই গাভি ও মহিষের গড় দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা বা পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ লিটার।

আর তাই ভারতে যুবরাজের শুক্রাণুর চাহিদা আকাশছোঁয়া। আর এই শুক্রাণু বিক্রি করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুবরাজের আয় বছরে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ রূপি। আর নয় বছরে এই আয় সাড়ে চার কোটি রূপির কাছাকাছি বাংলাদেশি টাকায় যা সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার বেশি।

ভারতে বিখ্যাত এই ষাঁড়ের বর্তমান বাজারমূল্যও অবিশ্বাস্য বলে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন করমবির সিং। তিনি জানান যুবরাজকে বিক্রির জন্য তাঁর কাছে সাত কোটি রূপির প্রস্তাব আছে।

যেই বড়লোক গরুর খামার মালিকরা যুবরাজকে কিনতে চাইলে তাঁদের জন্য যুবরাজের মালিক গত নয় বছর ধরে একটাই উত্তর নিয়ে আসছেন। সেটা হলো, ‘আমার যুবরাজ বিক্রয়যোগ্য নয়।’ তবে যুবরাজের মতো গরুর মালিক যারা হতে চান তাঁদের করমবীর সিং দিয়ে রেখেছেন একটি বিকল্প প্রস্তাব।

তাঁর কথা অনুযায়ী যুবরাজে শুক্রাণু মারফত যেসব গরুর জন্ম হবে তারা সবাই যুবরাজের মতোই হবে। তাই যুবরাজের শুক্রাণুতে মুরাহ বা সমগোত্রীয় গরুকে নিষিক্ত করানোর প্রস্তাব দেন তিনি।

কীভাবে যুবরাজের শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয় এবং কোন পদ্ধতিতে এর প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণ করা হয়, সেটা দেখতে দিল্লির লাগোয়া রাজ্য হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার সুনারিরিও গ্রামে করমবীর কৃষি-ফার্মে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুবরাজের মালিক।

সেখানেই যুবরাজের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে গাভীর কৃত্তিম প্রজনন করানো হয়। আর এই কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে করমবীর জানান, ‘যুবরাজ দিনে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ মিলিলিটার সিমেন দেয়। এই সিমেনের জন্য যুবরাজকে ইলেক্ট্রো-স্টিম্যুলেশন পদ্ধতিতে উত্তেজিত করা হয়। এরপর নিসৃত সিমেনকে পাতলা করে কয়েকটি ৫০০ থেকে ৬০০ ডোজের সলিউশন তৈরি করা হয়।’

করমবীর জানান, ৫০০ থেকে ৬০০ ডোজের সিমেনের সলিউশনের বাজার দাম প্রায় এক হাজার ২০০ রুপি। কিন্তু সমাজের উপকারের কথা ভেবে প্রতি ডোজের দাম রেখেছেন ৩০০ রুপি বলে দাবি করেন করমবীর।

এ ছড়া যুবরাজের খাওয়া-দাওয়া আর দেখভালের খরচও কম নয় বলে জানিয়েছেন করমবীর। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ষাঁড়টির পেছনে দৈনিক খরচ তিন হাজার রুপি। বার বছর বয়সী যুবরাজকে প্রতিদিন ১৫ কেজি আপেল, ২০ লিটার দুধ, ১৫ কেজি উন্নতজাতের শস্য, শুকনা ফল খাওয়াতে হয়। তা ছাড়া দিনে দুইবার তাকে তেল মালিশ করতে হয়। সকাল বিকেলে নিয়মিত হাঁটাতে নিয়ে যেতে হয়।

যুবরাজের মালিক করমবীর আরো জানান, বর্তমানে যুবরাজের দেখভালের জন্য ১০ জন নিয়মিত কর্মী রয়েছেন। এঁরা মাসে চারবার যুবরাজের পশম কেটে দেন এবং অন্যান্য সেবাযত্ন করেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, যুবরাজ মুরাহ প্রজাতির উন্নতজাতের ষাঁড়। আর মুরাহ প্রজাতির অতি উৎপাদনশীল এই ষাঁড় পাওয়া যায় প্রধানত মধ্য ও উত্তরভারতে। যুবরাজের প্রজাতির গবাদিপশুর সঙ্গে মিল রয়েছে জাফরাবাদী এবং নীলি রবি প্রজাতি গবাদি পশুর।



মন্তব্য চালু নেই