বিয়ে করতে চাওয়ায় গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয় শারমিনকে

তরুণীর নাম শারমিন। লিভ টুগেদার করেছিলেন দীর্ঘদিন। স্বামী, সন্তান রেখেই ভালোবেসেছিলন তাকে। স্বামী-স্ত্রীর মতোই চলাফেরা করতেন তারা। কিন্তু পরিচয় দিতেন কাজিন হিসেবে। ভালোবাসার এই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এই সম্পর্কের শেষ পরিণতি অত্যন্ত নির্মম। নৃশংসভাবে ভালোবাসার মানুষের হাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে শারমিনকে। এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে শারমিনের প্রেমিক রুবেল। রুবেল ও তার দুই বন্ধু মিলে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করেছে তাকে। রুবেল গ্রেপ্তার হলেও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ওই দুই বন্ধু এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার করতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

দিনটি ছিল গত বছরের ২৪শে মার্চ। ঘটনাস্থল রাজধানীর বাড্ডার নেপচুন আবাসিক এলাকার বালুর মাঠ। ওইদিন এক তরুণীর লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। লাশ উদ্ধার করা গেলেও কোনোভাবেই লাশের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যার আগে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ওই তরুণী। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটি তদন্ত শুরু করে। স্থানীয় বখাটে, সন্ত্রাসীদের টার্গেট করা হয়। ওই সময়ে জানা যায়, ওই তরুণীর বাসায় আসা-যাওয়া করতো রুবেল নামক এক যুবক। ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে চলে যায় সে। আবার ফিরে আসে প্রায় তিন মাস পরে। এ ঘটনায় সে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় রুবেল নামে ওই বখাটেকে। রুবেলকে আটকের পরই তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই ছবি দেখেই সে জানায়, তরুণী তার প্রেমিকা শারমিন। তাদের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জে। কিন্তু তখনও হত্যার বিষয় স্বীকার করেনি। রুবেলের কাছ থেকেই ওই তরুণীর ফোন নম্বর পায় পুলিশ। ওই নম্বরের কল লিস্ট উদ্ধার করে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় নিয়মিত কথা হতো রুবেলের সঙ্গে। এছাড়া যাদের সঙ্গে কথা হতো তাদের সঙ্গে কথা বলে শারমিনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। খবর পেয়ে বাড্ডা থানায় ছুটে যান তার স্বজনরা। এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রুবেল স্বীকার করে সে ও তার দুই বন্ধু মিলে শারমিনকে হত্যা করেছে।

গত বছরের ১৯শে নভেম্বর আদালতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় রুবেল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডা এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে থাকতের শারমিন। সেখানেই কাজিন পরিচয়ে আসা-যাওয়া করতো রুবেল। ওই বাসা খুঁজে পাওয়ার পর প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছে, শারমিন একটি চাকরি করতেন। সকালে বের হয়ে সন্ধ্যার পর আসতেন। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। যে কারণে অনেকেই তার নাম পর্যন্ত জানতেন না।

সূত্রমতে, বাড্ডায় আসার আগে টঙ্গীতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন শারমিন। তার স্বামীর নাম মাহবুব। একটি বাচ্চাও রয়েছে তাদের। ওই সময়েই একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শারমিন। সেখানে এক সহকর্মীর মাধ্যমে পরিচয় হয় রুবেলের সঙ্গে। পরিচয় থেকে হয় বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে প্রেমে গড়ায়। এর মধ্যেই স্বামী মাহবুবের সঙ্গে রাগ করে শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড্ডায় বাসা ভাড়া নেন শারমিন। কয়েক দিনের মধ্যেই ওই শিশুকে পটুয়াখালীতে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। বাড্ডায় আসার পর এশিয়া ওয়াশিং ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রুবেল জানিয়েছে স্বামী-স্ত্রীর মতোই সম্পর্ক ছিল শারমিনের। শারমিন তাকে বিয়ে করা জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিল না রুবেলের। এতে ঘটে বিপত্তি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। ঘটনার দিন ২৩শে মার্চ ঝগড়ার একপর্যায়ে সন্ধ্যার পর পরিকল্পিতভাবে গল্পের ছলে শারমিনকে বালুর মাঠে নিয়ে যায় রুবেল। সেখানে পূর্ব থেকে প্রস্তুত ছিল রুবেলের বন্ধু সুজন ও মনির। তিনজন মিলেই শারমিনকে গলা কেটে হত্যা করে।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, শারমিনকে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত তার প্রেমিক রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হলেও সুজন ও মনিরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে তিনি জানান, সুজন ও মনির ভাসমান। যে কারণে তাদের খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সচেষ্ট বলে জানান তিনি। এসআই আমিনুল বলেন, শারমিন ভাড়া থাকতেন বাড্ডার সাঁতারকুলের পূর্ব পদরদিয়ার হাসানের বাড়িতে। কিন্তু লাশ পাওয়া যায় বাসা থেকে অনেক দূরে বাড্ডার বালুর মাঠে। যে কারণে শুরুতে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই