বিহারে পরাজয় স্বীকার প্রধানমন্ত্রী মোদির বিজেপির

ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে।

আর বিজেপিকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন আঞ্চলিক দল জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও কংগ্রেসের সাথে নীতিশ কুমারের জোট বিহার বিধানসভার দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন জিততে চলেছে।

গত দুমাস ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দফায় দফায় বিহারে নির্বাচনী প্রচারণায় গেছেন – কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার প্রায় অর্ধেক বিজেপি সদস্যই প্রচারণার জন্য বিহারে পড়েছিলেন, কিন্তু তার পরও বিজেপি বিহারে তাদের ভরাডুবি ঠেকাতে পারল না।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিহারে বিজেপির এই ভরাডুবি প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য বিরাট একটি ধাক্কা।

লালু প্রসাদ যাদবের দল একক বৃহত্তম হলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নীতীশ কুমারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।

এ বছরের গোড়ায় দিল্লির নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর এই বিহারের হার প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জুটির একচ্ছত্র ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সকালে বিহারের ভোট গণনা শুরুর মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায় বিজেপি জোটের রাজ্যের ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনা নেই – টানা তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতীশ কুমার।

151108050536_151108043801_celebration_at

কিন্তু নীতীশ কুমারের হ্যাট্রিকের চেয়েও ভারতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের যেটা ভাবাচ্ছে, তা হল মাত্র দেড় বছর আগেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন যে বিজেপি জোট বিহারে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল তারা কেন এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল?

বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা রাম মাধব স্বীকার করে নেন, ‘এই ফল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল – কাজেই এর কারণ বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে। আমাদের ধারণা ছিল লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে, কিন্তু জেডিইউ জোট এত ভাল করবে তা বিজেপি ভাবেনি, এমন কী হয়তো তারা নিজেরাও ভাবেনি।”

নীতীশ কুমার, যিনি রাজ্যের গত দুটো নির্বাচনে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়েই ভোটে জিতেছিলেন তিনি এবারে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে হাত মিলিয়েছিলেন তাঁর পুরনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ লালু প্রসাদের সঙ্গে।

দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত লালু নিজে ভোটে লড়তে পারেননি, কিন্তু সমান সংখ্যক আসনে লড়েও তাঁর দল কিন্তু জোটসঙ্গী জেডি-ইউয়ের চেয়েও বেশি ভাল করেছে, অন্তত আশিটা আসন পেতে চলেছে তারা।

বিহারের নির্বাচনী ফল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য এখনই কোনও বিপদ বয়ে আনছে না-ঠিকই, কিন্তু সারা দেশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর বিপুল গ্রহণযোগ্যতার ছবি যে এতে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে তাতে কোনও সংশয় নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব বলছিলেন, ‘সারা দেশে বিজেপির একচ্ছত্র রথ ছুটবে বলে দলের নেতারা যে বড়াই করছিলেন তা এবার বড় ধাক্কা খেয়েছে – এটা একটা স্বস্তির ব্যাপার।’

তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো স্বস্তি পাবেন দেশের সংখ্যালঘু শ্রেণী ও উদারপন্থীরাও – যারা গত দুমাস ধরে দাদরি বা বিহার নির্বাচনকে ঘিরে নানা প্ররোচনামূলক বা উত্তেজক কথাবার্তার বিস্ফোরণ একেবারেই হজম করতে পারেননি।”

ফলে বিহারের ফলাফল নরেন্দ্র মোদির সরকারকে দিশা পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলেও বিশ্লেষকদের ধারণা – এবং পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার নানা ক্ষেত্রে যে সব সংস্কার নীতি ঘোষণা করেছিল তার ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠবে।বিবিসিবাংলা



মন্তব্য চালু নেই