‘বিষ’ বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রীকে রওশন

খাদ্যে ফরমালিন প্রয়োগ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোর পদক্ষেপ চেয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
শনিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রওশন বলেন, “আপনি যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে থাকেন তাহলে খাদ্যে বিষ বন্ধ করুন। আপনার মনে দেশের মানুষের জন্য দরদ নেই? বিষ বন্ধ করবেন না? এর দায়িত্ব আপনার।”

তিনি বলেন, “আপনার বাবা (বঙ্গবন্ধু) করে যেতে পারেননি। ভেজাল বন্ধে উনি ’৭৪ সালে আইন করেছিলেন। যে খাদ্যে ভেজাল মেশাবে তার হয় যাবজ্জীবন না হয় ফাঁসি। সেই আইন কোথায়? বাস্তবায়ন নেই কেন? উনি (বঙ্গবন্ধু) যদি চিন্তা করতে পারেন আপনি (শেখ হাসিনা) কেন পারছেন না?”

শেখ হাসিনাকে রাতে বের হয়ে মানুষের অবস্থা সরেজমিন দেখার পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “মোঘল বাদশাহরা রাতে বের হতেন। আপনি রাতে বেরিয়ে দেখেন। বাতাসের কী অবস্থা? মানুষ কিভাবে বাঁচে? নদীর পানি দূষিত।

“আপনি ভালো পানি খাচ্ছেন বলে বুঝতে পারছেন না। মানুষ তো খাচ্ছে না। কাদের নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বেন? নদীর পানি দূষিত। সব দূষিত। তাহলে বাঁচব কী করে? দেশ শ্মশানের মতো হয়ে যাবে।”

খাদ্যে ফরমালিন মেশানো নিয়ে রসিকতা করে রওশন এরশাদ বলেন, “ফরমালিন খাচ্ছি তো, ডেডবডি কবরে পঁচবে না। আমরা আউলিয়া হয়ে যাব। পোকায় খাবে না। ভয় পাবে খেলে যদি মরে যায়। এটা তো ভালো কথা।”

তিনি বলেন, “৩ হাজার মন আমে ফরমালিন, ৮০০ মন জামে, ৩ লাখ লিচুতে। কেন শাস্তি হলো না? শাস্তি না হলে অন্যায় করতেই থাকবে। মাছে, মাংসে, আচারে বিস্কিটে, জেলিতে এমনকি ধনে পাতাতে ফরমালিন। এই যদি হয় মানুষ খাবে কী? ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনে অস্পষ্টতা। ১৭ হাজার টন ফরমালিন দেশে এসেছে। এগুলোতে আমাদের পেটেই গেছে।”

আর্থিক খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এত দক্ষ অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকার পরও হল-মার্কের ঘটনা কেন? শেয়ার বাজারে ধস নামল কেন? ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেল কেন? মানুষের আস্থা ব্যাংকের ওপর থাকছে না। মানুষ মনে করছে, ব্যংকে টাকা রাখা নিরাপদ নয়। কেন এই অবস্থা হল? মানুষ চিন্তা করে কারো শাস্তি হল না। যারা ধরা পড়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।”

ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষাও শিখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন। বিদেশে গেলে ছেলেমেয়েরা পড়তে যায়, তারা কোন ভাষায় কথা বলে সেটা চিন্তা করতে হবে। অনেক ভাষা আছে। সেগুলো না শিখলে পৃথিবীতে চলতে পারব না।”

“ইংরেজি ছাড়া পৃথিবী চলবে না। মন্ত্রীরা বিদেশে গেলে সেটা বোঝেন। আরবি, কোরিয়ান ভাষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমিকরা সেখানে যায়। ভাষা শিখে গেলে দক্ষ শ্রমিক হবে। তাহলে রেমিটেন্স আরো বেশি আসবে।”

দেশের উন্নয়নে সরকারকে সহযোগিতার কথা তুলে ধরে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “অতীতে বিরোধী দল-সরকারি দল একসঙ্গে বসত না। আমরা সহযোগিতার কথা বলেছি। তার মানে এই নয় যে আমরা বিরোধী দল নই। আমরা চাই দেশের উন্নয়ন-গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে।”

প্রথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধ করতে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তিনি। এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়ন ও বেতন-ভাতা নিয়মিত প্রদানে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতেও বলেন রওশন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে বিনিয়োগ হয় না। দেশের মূলধন বিদেশে চলে যায়। যদি বিচার বিভাগ মুক্তভাবে আদালত পরিচালনা করতে পারে তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এটা হলে মানুষ অন্যায় করতে ভয় পাবে। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

কর্মসংস্থানেসর সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে রওশন বলেন, “তরুণ প্রজন্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেলে তারা এমনেতিই বিপথে যাবে। খুন-রাহাজানি-টেন্ডারবাজি করছে। দেখতে হবে কেন তারা এগুলো করছে। কর্মসংস্থান নাই বলে এগুলো করছে।”

এর আগে সকাল ১০টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

শুরুতে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “নালিশ করার জায়গা নেই। সংসদীয় রাজনীতি বুঝতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিএনপির নেতার বলেছিল সরকার পতন ঘটাবেন। সে কারণে আমার মনে হয়, নূর হোসেন যে বিএনপি করত সে রাতারাতি আওয়ামী লীগে কেন যোগ দিয়েছে। তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে।”

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে আমু বলেন, “যারা সরকার মানে না, গণতন্ত্র মানে না, দেশের সার্বভৌমত্ব বোঝে না তাতের সঙ্গে কী আলোচনা?”



মন্তব্য চালু নেই