বিষাক্ত দাঁত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সরকার

ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে নাশকতা উৎপাদনের কারখানা আখ্যা দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার বিরোধী মত ও দলকে দমাতে বিষাক্ত দাঁত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার উচ্ছিষ্টভোগীদের অরুচিকর বক্তব্যের বাকস্বাধীনতাই এখন গণতন্ত্র হিসেবে চালু রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুর গণমাধ্যমে পাঠানো দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘যারা শতকরা ৫ ভাগ ভোটের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে তাদেরকে নাশকতা, সন্ত্রাস, হানাহানি, খুনোখুনির ওপর নির্ভর করেই দেশ চালাতে হয়। কারণ তাদের পেছনে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। এই অবৈধ সরকারের কোনো বৈধতা নেই, আর এ কারণের বিরোধী মত, সমালোচনা এবং বিরোধী দল উচ্ছেদ অভিযানে এরা এখন সকল শক্তি নিয়োগ করেছে। এজন্য তারা নিজেদের অবৈধ স্বত্বাকে রক্ষা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এই ভোটারবিহীন সরকারের নিত্য সঙ্গী হচ্ছে অবিরাম মিথ্যাচার। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বলছেন দেশে নাকি তিনি গণতন্ত্র দিয়েছেন। এক অদ্ভুত মানবী হচ্ছেন আমাদের ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার নিজ কার্যালয়ে বালুর ট্রাক, ইটের ট্রাকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতাকে কারারুদ্ধ করে দেশব্যাপী নির্বিচারে গ্রেপ্তার আর ব্যাপক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে, গণমাধ্যমে বিরোধীদের বক্তব্য বন্ধ করে দিয়ে এক নতুন ধরনের গণতন্ত্র চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এ ধরনের একদলীয় গণতন্ত্র তাদের ঐতিহ্য।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন দমাতে শতকরা পাঁচ ভাগ জনসমর্থনের এই সরকার নিষ্ঠুর জুলুমের বিষাক্ত দাঁত নিয়ে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে চালানো হচ্ছে অবর্ণনীয় জুলুম। দেশব্যাপী জনগণকে নিপীড়নের এই দুঃসহ যন্ত্রণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তার উচ্ছিষ্টভোগীদের কুৎসা ও অরুচিকর বক্তব্যের বাকস্বাধীনতার গণতন্ত্রই এখন চালু রয়েছে।’

রিজভী আহমেদ গভীর আক্ষেপ করে আরো বলেন, ‘দেশের জনগণ এখন শ্বাসরুদ্ধ। চারদিকে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ। দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন বিএনপি ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। এই অবৈধ সরকার শান্তি, সম্প্রীতি ও শুভেচ্ছা নির্বাসনে পাঠিয়ে নিজের দেশের লোককেই লাঠিপেটা করতে বেশি পারঙ্গম হয়ে উঠেছে।’

তাই রক্তাক্ত হানাহানি আর নাশকতা উৎপাদনের কারখানা হচ্ছে এই অবৈধ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। এর বহু দৃষ্টান্ত জনগণের সামনে জাজ্বল্যমান। নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলাটা আর বর্তমানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন নিক্ষেপ করা একেবারে হুবুহু মিলে যায়। সুতরাং নাশকতার চর্চাকারী আওয়ামী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর তীব্র হিংসাপরায়ণতাই এদের ধর্ম, আর তাই এই অবৈধ শক্তির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা চলমান আন্দোলন নির্দয় দলন-পীড়নের মধ্যেও দমিয়ে রাখতে না পেরে তারা আবারো ৫ জানুয়ারির পূর্বাপর পরিস্থিতির মতো নিজেরাই নাশকতা সৃষ্টি করে সেটি আন্দোলনকারী বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অপপ্রচারের ঢাকঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ আরো বলেন, ‘কোনো বর্বরোচিত আক্রমণই বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারবে না। অমানবিক নাশকতা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও জনগণ তা কখনোই বিশ্বাস করবে না। যদিও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সকল গণমাধ্যম দখল করে সেগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ন্যায় যখন যা ইচ্ছা তাই বলছেন, তথাপিও জনগণই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিচারক, জনগণ এই অত্যাচারীদের দুঃশাসনের বিচার করবেই।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক কূটনীতিক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবিদ্ধ করার প্রতিবাদে দেশব্যাপী আজকের ১২ ঘণ্টার হরতাল সফল করার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণকে আহ্বান জানিয়েছেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’



মন্তব্য চালু নেই