বিশ্ব মা দিবসঃ মায়ের প্রতি ভালোবাসা

মা’ ডাকটি যে কত মধুর তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যাদের মা নেই তারাই বুঝতে পারে মা যে কত আপনজন। একটি অক্ষর দিয়ে যার নাম সেই প্রিয় নামটি হলো মা। মাকে নিয়ে অনেক কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস লেখা হয়েছে। মাকে নিয়ে অনেকে অনেকভাবে লিখে থাকেন। কোন লেখক যদি তার প্রথম বই প্রকাশ করে তাহলে বইটি উৎসর্গ করে মাকে নিয়ে। সন্তান যখন বাহিরে থাকেন বাসায় আসার জন্য পাগল হয় একমাত্র মায়ের জন্য। বাসায় এসে প্রথমে দেখা করেন মায়ের সঙ্গে। সন্তান যখন ছোট থাকে তখন মা ছাড়া কিছুই সে বুঝে না। মা না থাকলে তার সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মায়ের জন্য সে সবকিছুই হারাতে পারে। একটি সন্তানকে মানুষ করতে মায়ের যে কত কষ্ট করতে হয় তা এই ছোট প্রবন্ধে লিখে শেষ করার মত নয়। আসলে মা যে কত আপন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমাদের আনন্দের বিষয় যে, সেই মাকে নিয়ে আজ সারা বিশ্বে মা দিবস পালন করা হচ্ছে। কয়েক বছর থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে আমাদের দেশে। মিডিয়ার মাধ্যমে এই দিবসটির কথা আমরা জানতে পারি।

পত্রিকা সূত্রে জানা যায় যে, রোমান যুগে রোমে ২২ থেকে ২৫ মার্চ ঈশ্বরের মাতা মাইবেলির সম্মানে মাদারস ডে পালন করা হয়। তবে সতের শতকের শুরুতে ব্রিটেনে মে মাসের চতুর্থ রোববারকে বলা হতো মারারিং সানডে। এ সময় সেখানকার সব কর্মচারী সরকারি ছুটিতে বাড়িতে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে চলে যেত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে ভার্জিনিয়ার ১৯০৮ সালে গ্রাকর্ডন চার্চ থেকে মাদারস ডের জন্য একটি ক্যাম্পেইন শুরু করা হয় এবং তারা তাদের মায়েদের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে মা দিবস পালন করেন। তবে আমেরিকাতে ১৮৭২ সালে শান্তির মাদারস ডে পালিত হয় ২ জুনে। আর ১০মে মাদারস ডে উদযাপিত হয় ১৯০৫ সাল থেকে। উদ্যোক্তা ছিলেন সেই পশি ভার্জিনিয়ার একটি চার্চ। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মা দিবস পালন করা হচ্ছে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের রোববার।

আসলে মায়ের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করে শেষ করার মত নয়। মায়ের আসনে শুধু মা। তবে আমাদের মাঝে অনেকে মায়ের সঙ্গে যেসব আচরণ করে তা বলার মত নয়। আমার আজো মনে পড়ে সেই ছোট বেলায় আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আব্বা আমাকে একদিন খুবই মারধর করলেন। আমি রাগ করে বাড়ী থেকে চলে গেলাম অনেক দূরে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পর বাড়ীতে ফিরলাম। মা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন এবং খুবই আদর করলেন। বললেন বাবা তুমি আর দুষ্টামি করো না। দুষ্টামি করলে তোমার বাবা তোমাকে আবার মারবে। তোমাকে মারলে আমি যে খুবই কষ্ট পাই। মা একথা বলছে আর চোখ দিয়ে পানি ফেলছে। মায়ের চোখের পানি দেখে আমিও আর চোখে পানি ধরে রাখতে পারলাম না। বাহিরে কোথায় গেলে আসতে দেরি হলে মা খুবই চিন্তায় থাকে কখন তার সন্তান আসবে। মা সব সময় সন্তানের ভাল কিছু কামনা করেন। মায়ের দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেন। মায়ের দোয়া যে রকম কবুল করেন তিনি সেরকম বদদোয়াও কবুল করেন। আমি আমার জীবনে অনেক দেখেছি যে মা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে তার সন্তানের জন্য। মা যে তার সন্তানের জন্য কত কষ্ট করেন তার হিসাব দেওয়া খুবই কঠিন। আমি অনেক সময় বাড়ীতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। বাড়ীতে এসে দেখি মা ঘুমিয়ে পড়ছে। মাকে ঘুম থেকে ডেকে বলি মা তুমি ভাত খেয়েছো। মা উত্তরে বলে তোর জন্য এখনো খাইনি। তুই আসবি তার পরে খাবো এই বলে ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর মায়ের সঙ্গে ভাত খাই। ভাল তরকারী হলে মা আমাকে বেশি করে দেন। ভাল মাছ হলে বড় পিসটি আমাকে তিনি তুলে দেন। উনাকে যদি বলি মা আপনিও খান তিনি বলেন বাবা তুমি খাও আসলে মায়ের মত আদর যতœ আর কেউকি করতে পারে? মোট কথা মা সন্তানের জন্য সবকিছু দিতে প্রস্তুত। মা যে কত আপন তা ভাষায় প্রকাশ করে এবং লিখে শেষ করা যাবে না। ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমি আমার বড় ভাই ও সেজো ভাইকে পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশে বিদায় দেওয়ার জন্য ঢাকায় হজ্ব অফিসে গিয়ে ছিলাম। ঢাকা থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে বাসায় চলে এসেছি। বাসায় এসে মাকে না পেয়ে ছোট বোনের বাসায় চলে গেলাম মাকে দেখার জন্য মাকে দিকে মনের সব কষ্ট দুর হয়ে গেল। মা আমাকে অনেক আদর করলেন মাথায় হাত দিয়ে আমাকে অনেক দোয়া করলেন মায়ের সঙ্গে অনেক কথা বললাম। আমি যদি বুঝতে পারতাম মা ২দিন পরে পৃথিবী থেকে চলে যাবে তাহলে সারাদিন মায়ের সাথে থাকতাম। ২দিন পর আমার মা পৃথিবী থেকে চির/ বিদায় নিয়ে চলে যায়। মা যে, আমাকে কত ভালোবাসে ছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি মানুষ জন্ম গ্রহণকরলে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কেউ চিরস্থায়ী এই পৃথিবীতে থাকবে না। আমার মা যখন পৃথিবী থেকে চলে যায় তখন আমার মনকে বুঝাতে পারিনি আমার মা কেন চলে যাবে। মায়ের ভালবাসার মত কারো ভালবাসা হতে পারে না। আমি যখন এই প্রবন্ধ লিখছি তখন আমার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। সারাদিন কত যে মায়ের কথা মনে পড়ে তা বলতে পারবো না। চোখের পর্দায় মায়ের স্মৃতি মনে পড়ে। মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করি। হে আল্লাহ তুমি আমার মাকে জান্নাতে রাখো। আমি বিশ্বাস করি আমার মা পরকালে সুখে ও শান্তিতে আছে। প্রতিদিন নামাজে মায়ের জন্য দোয়া করি। সন্তানের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেন। পাঠকদের প্রতি আবেদন রইল সকলে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। এবং আপনারদের মাকে কোন কষ্ট দিবেন না। যাদের মা জীবিত আছেন তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন আর যাদের মা বেঁচে নেই তাদের জন্য দোয়া করবেন। সন্তানের দোয়া বিফলে যাবে না। সন্তান যখন মায়ের জন্য দোয়া করেন সেই দোয়া আল্লাহ্ পাক কবুল করেন। গ্রান্ড হোটেল মোড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোক্তার হোসেন এর সঙ্গে ২০১৪ সালে একই সঙ্গে পবিত্র হজ্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। মক্কা মদিনাসহ বিভিন্ন জায়গায় সফর করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছিলাম হাজী সাহেবের সঙ্গে তিনি আমার একজন দ্বীন ভাই এবং ভালো বন্ধু।

মা দিবস সম্পর্কে কথা বলেছিলাম মাকে কেমন ভালবাসেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন প্রচন্ড- প্রচন্ড রকমের ভালবাসা, মাকে ছাড়া কিছু কল্পনাই করতে পারি না। আমি প্রশ্ন করেছিলাম বর্তমানে অনেকে যে মায়ের সঙ্গে বেয়াদবি করেন। তিনি উত্তর দিলেন তাদের জীবনে কখনো শান্তি আসবে না। যারা মায়ের সঙ্গে বেয়াদবি করে তাদের মত অমানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তারা মানুষ নয়। তিনি আরো বললেন, আমরা যেহেতু মুসলমান সেহেতু আল্লাহকে পেতে হলে সবার আগে মা-বাবাকে ভালবাসতে হবে। তাদের মনে কষ্ট দিয়ে কখনো আল্লাহকে পাওয়া যাবে না। ভাবা যায় না, যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত সেই মাকে কেন সন্তানেরা কষ্ট দেয়। আর যারা মাকে কষ্ট দেয় তারা কিভাবে সুখে থাকে। তিনি আরো বললেন আমাদের সমাজে অনেকে আছে মা-বাবাকে বাদ দিয়ে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে বেশি ভালবাসে। যে মা-বাবা এত কষ্ট করে মানুষ করলো সেই মা-বাবার মনে কষ্ট দিয়ে অন্য কাউকে ভালবেসে লাভ হবে কি? তবে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে অবশ্যই ভালবাসবে। তাদের সঙ্গে ভাল আচরণ করতে হবে, তাদের অধিকার তাদেরকে দিতে হবে কিন্তু মা-বাবাকে বাদ দিয়ে নয়। জাতীয় দৈনিকে গত কয়েক দিন আগে একটি খবর দেখলাম এক ছাত্র একই কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করতো। প্রেমটি ছিল তাদের খুবই গভীর। একদিন ছেলেটির মা তাকে বললো বাবা তুমি এখন লেখাপড়া করো এ সমস্ত প্রেমভালবাসা মানুষকে সুখ এনে দিতে পারেনা। তুমি এগুলো বাদ দিয়ে দাও এখন লেখাপড়া করার সময়। তারপর ছেলেটি তার মাকে বললো আমি যা করছি তা ভালোই করছি এ সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। আমার ভাল আমি বুঝি তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। এক পর্যায়ে মা ছেলে কথা কাটাকাটি হতে লাগলো।

তারপর ছেলেটি মাকে একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করলো। মা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল। মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলো বেশ কয়েকদিন পর মা মারা গেলেন। সারাদেশে এ ধরণের ঘটনা যে কতই ঘটছে তার হিসাব আমাদের মাঝে নেই। আমরা যদি আজ আমাদের আশপাশের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারবো মায়েদের প্রতি কতই না অবিচার করা হচ্ছে। তবে একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা মায়ের প্রতি খারাপ আচরণ করছে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সুখে থাকতে পারবে না।

যে মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লালন-পালন করে বড় করছে সে মাকে আজ আমরা কতটুকু সম্মান করছি তা আজ ভাববার বিষয়। ভাবতে অবাক লাগে আমরা আজ বিয়ে করার পর (বেশির ভাগ) মাকে ভুলে যাই। তখন শুধু বউকে ভালবাসি, যে মা-বাবা অনেক কষ্ট করে মানুষ করছে তাদেরকে তখন একদম ভুলেই যাই। (তবে সবার কথা বলছি না) মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন আমরা তাদের প্রতি কিরূপ আচরণ করি তা আজ চিন্তা করার বিষয়। কত বৃদ্ধ মা-বাবা আজ সন্তানের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার হিসাব করা খুবই কঠিন। আমরা কি একটু ভাবতে পারি না, যে মায়ের স্নেহের কারণে আজ এত বড় হয়েছি সে মাকে আমরা আজ কতটুকু মূল্যায়ন করি। যারা আমার এই প্রবন্ধটি পড়বেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা যারা মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন আর করবেন না। প্লিজ মায়ের মনে আর কষ্ট দিবেন না। অনুরোধ থাকলো সকলের প্রতি। আজ বিশ্ব মা দিবসে যাদের মা চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন সে সমস্ত মায়েদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ পাক যেন মাকে জান্নাতবাসী করেন। যাদের মা বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবেন। মা দিবসে সকলের প্রতি রইল এই আবেদন।



মন্তব্য চালু নেই