বিশ্বে হাঁপানি রোগী ২৩৫ মিলিয়ন!

বর্তমানে সারা বিশ্বে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ২৩৫ মিলিয়ন। এ্যাজমা বা হাঁপানি নামক এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। তবে সব বয়সেই হাঁপানি হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হাঁপানি রোগ নিয়ে অনেক মানুষ সারা জীবন কাটিয়ে দেন। এখন পর্যন্ত গবেষকরা আবিষ্কার করতে পারেনি কেন এ রোগ হয়। তাদের ধারণা জিনগত ও পরিবেশগত কারনে হাঁপানি রোগ হয়ে থাকে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে এ রোগ কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হাঁপানি রোগ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন-

তীব্র হাঁপানি
এতে ফুসফুসের বায়ুবাহী নালীসমূহ হঠাৎ করে সংকুচিত হয় ও শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট দেয়।

দীর্ঘমেয়াদী হাঁপানি
এই হাঁপানিতে রোগী ঘন ঘন আক্রান্ত হন। রোগ নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

হাঁপানি রোগ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন-

– এলার্জির কারণে হাঁপানি হতে পারে। সাধারণত ফুলের রেণু, বিভিন্ন প্রাণীর লোম, মাইট ও ধুলাবালি ইত্যাদি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকলে এমনটা হতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বাধা দেয়। একে এটোপিক এ্যাজমা বা এলার্জিক এ্যাজমাও বলা হয়।

– নন এলার্জিক এ্যাজমা সাধারণত ধূমপান, রাসায়নিক দ্রব্য, জীবাণুর সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অট্টহাসি, অধিক ব্যায়াম, এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া, খাদ্য সংরক্ষণকারী উপাদান, পারফিউম, অতিরিক্ত ঠান্ডা, গরম, আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাসে হতে পারে।

– অকুপেশনাল বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাজমা সাধারণত চাকরি নেবার কয়েক মাস থেকে শুরু হয়। সাধারণত কর্মস্থল ছেড়ে আসলে বা ছুটিতে থাকার সময়ে লক্ষণসমূহ কমে যায়। ‘স’ মিলের গুড়া, রাসায়নিক ধোঁয়া, সবসময় ধুলাবালিযুক্ত পরিবেশ, সিমেন্ট কারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, আটা ও মসলার মিল, রাইস মিল, জুট মিল, স্পিনিং মিল, রংয়ের কারখানা, রাসায়নিক সার কারখানা, ফটোকপি মেশিন, ড্রাইভিং, পোল্ট্রি ফার্ম, বেডিং স্টোর ইত্যাদিতে কাজ করলে শ্রমিকদের এ ধরনের হাঁপানি হতে পারে।

– হৃদপিণ্ড যখন তার স্বাভাবিক রক্ত সংবহন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন ফুসফুসে পানি জমে বায়ুনালীকে সংকুচিত করে ফেলে। এতে হাঁপানি সৃষ্টি হয়। এই হাঁপানি ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা পর আক্রমণ করে। কারণ শুয়ে থাকলেই ফুসফুসে পানি জমে। শ্বাসকষ্টে রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।

– মৌসুমী এ্যাজমা বা হাঁপানি বিশেষ ঋতুতে দেখা দেয়। যেমন- কারো গরমে বাড়ে, কারো শীতে বাড়ে।

যা খাবেন

এ রোগ প্রতিহত করতে সব সময় কুসুম গরম খাবার খাওয়া উচিৎ। খেতে হবে বেশি করে মৌসুমী ফলমূল। প্রতিদিন সকালে ছাগলের দুধ (তেজপাতা, পুদিনা ও কালোজিরা সহ) খেতে পারলে উপকার পাওয়া যায়। খাবারে অবশ্যই আয়োডিন যুক্ত লবণ ও সৈন্ধব লবণ থাকা চায়। মধু, স্যুপ, জুস খেতে পারেন নিয়মিত।কালোজিরার তেল এ রোগীর জন্য খুবই উপকারী। চা খাওয়ার সময় আদাকুচি ও পুদিনা পাতা মিশিয়ে নিতে পারেন।

যা খাবেন না

এই রোগী সুস্থ থাকতে কিছু খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন। যেমন- মিষ্টি দধি ও মিষ্টান্নসহ ফ্রিজে রাখা যেকোন খাবার। কচুর লতি, তিতা জাতীয় খাবার, পালং শাক ও পুই শাক, মাসকলাই খাওয়াও ক্ষতিকর। এছাড়া মাটির নীচের সবজি যেমন-গোল আলু, মিষ্টি আলু, শালগম, মুলা, গাজর ইত্যাদি। এছাড়াও ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, চিংড়ী মাছ,পাম অয়েল, ডালডা ও ঘি এড়িয়ে চলবেন যতোটা পারা যায়।

হাঁপানি রোগীর পোশাক

পোশাক-পরিচ্ছদ হবে সম্পূর্ণ কটন জাতীয় নরম ঢিলে-ঢালা। সিল্ক, সিনথেটিক, পশমি কাপড় না পরাই ভালো। পাতলা বালিশ ও নরম বিছানায় শোয়া উচিত। বাসস্থান শুষ্ক ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো-বাতাস সম্পন্ন হওয়া উচিৎ।



মন্তব্য চালু নেই