বিশ্বের চমৎকার ৬ টি চলচ্চিত্র যাদুঘর

চলচ্চিত্র একটি অসাধারণ বিনোদন মাধ্যম যা আমাদেরকে মানুষের জীবনের গল্পের সাথে, হাসি-কান্না, হতাশা আবার জেগে ওঠা এই সবকিছুর সাথে যেন সামনাসামনি পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা শুধু সেই গল্পগুলো দেখি না, আমরা সেই জীবনটা বাঁচি। একটি ভাল চলচ্চিত্র দেখার সময় আমাদের মনে হয় না পর্দার ওপারে কেউ অভিনয় করছে, সেই ছবি আমাদের চোখে তখন বাস্তব। আমরাও তাঁর অংশ।

চলচ্চিত্র জগতে হলিউডের অনেক বড় অবদান থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও অনেক অসাধারণ কাজ উঠে আরও সমৃদ্ধ করেছে এর ভান্ডারকে। তাঁর সাথে দিনকে দিন যুক্ত হওয়া প্রযুক্তি আমাদেরকে আরও বাস্তবতার অনুভূতি দেয়। সিনেমা মিউজিয়ামগুলো আসলে সিনেমাকে বোঝা, এর ইতিহাসকে জানা এবং সিনেমাসংক্রান্ত প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। জেনে নিই কয়েকটি চমৎকার চলচ্চিত্র মিউজিয়ামের কথা।

চীনা ন্যাশনাল ফিল্ম মিউজিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রফেশনাল সিনেমা যাদুঘর এটি। এটি বেইজিং এ অবস্থিত। চাইনিজ সিনেমার শতবর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে এই যাদুঘর খোলা হয় ২০০৫ সালে। চীনের সিনেমার পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরতে এখানে রাখা হয়েছে ১৫০০ ফিল্ম প্রিন্ট, হাজারো স্থিরচিত্র এবং অন্যান্য অসংখ্য সিনেমা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি। যাদুঘরটি স্থাপিত ৬৫ একর জায়গা জুড়ে। এখানে ২০ টি স্থায়ী এক্সিবিশন হল আছে, আরও আছে ৬টি ভিডিও থিয়েটার এবং একটি আইম্যাক্স থিয়েটার। প্রতিবছর লাখো দর্শণার্থী যাদুঘরটি দেখতে আসে।

মিউজিয়াম অব সিনেমা, ফ্রান্স
বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ফ্রান্সে। এই লা সিনেমাথেক ফ্রাঞ্চাইজে বা সিনেমার মিউজিয়ামটি অবস্থিত প্যারিসে। এটি যেন ফ্রান্সের চলচ্চিত্র জগতের উপর স্পটলাইট। ১৯৩৬ সালে খোলা এই যাদুঘরে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল সিনেমা আর্কাইভ। একটি অতুলনীয় সমৃদ্ধ পাঠাগার এবং ফিল্ম প্রোগ্রামগুলো যাদুঘরে যুক্ত করেছে ভিন্ন মাত্রা। অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার যেমন রবার্ট ব্রেসন, ফ্রান্সিয়াস ট্রুফট এবং জিন লুস গডার্ড প্রায়ই যাদুঘরটি দর্শনে আসেন।

মিউজিয়াম অব ফিল্ম এবং টেলিভিশন, বার্লিন
বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ভ্যানু থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত মিউজিয়াম অব ফিল্ম এবং টেলিভিশন বিশ্বের অন্যতম খ্যতনামা একটি চলচ্চিত্র যাদুঘর। এটি খোলা হয় ২০০০ সালে। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে জার্মান সিনেমা জগতের তাৎপর্য্যপূর্ণ মুহুর্তগুলো। এখানে বিশাল একটি সিনেমা আর্কাইভ এনং লাইব্রেরি আছে। আছে অনেক বিরল স্থিরচিত্র, প্রকৃত সিনেমা প্রপস এবং কস্টিউম। যাদুঘরটিতে বিভিন্ন সময় থিমেটিক এক্সিবিশনও আয়োজন করা হয়।

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব সিনেমা, টরিনো
মল এন্টোলিয়ানা টাওয়ারে অবস্থিত যাদুঘরটি স্থাপিত হয় ২০০৮ সালে। এটি গড়ে উঠেছিল আসলে সিনেমাপ্রেমী মারিয়া আদ্রিয়ানা প্রোলো এর ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রদর্শনের জন্য। যাদুঘরটির সংগ্রহে এখন আছে বিভিন্ন সিনেমা সংক্রান্ত সামগ্রী যেমন সিনেমা রিল, পোস্টার এবং কস্টিউম যেগুলো মূলত ইতালিয়ান চলচ্চিত্রকে তুলে ধরে। এখানে বেশ কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়েছে, এর মধ্যে টরিনো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বেশ বিখ্যাত।

অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর মুভিং ইমেজ, অস্ট্রেলিয়া
এটি বিশ্বের অন্যতম প্রিমিয়ার সিনেমা মিউজিয়াম। মেলবর্নে অবস্থিত। এটি দেশটির ২য় জনপ্রিয় যাদুঘর। এটি ১৯৪৬ সালে ভিক্টোরিয়ার স্টেট ফিল্ম সেন্টারে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন এটি অস্ট্রেল্যান সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে সিনেমা সংক্রান্ত ঐতিহাসিক অনেক শিল্প সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। যাদুঘরে আছে ২ টি থিয়েটার, এখানে নিয়মিত ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলো অনুষ্ঠিত হয়।

ন্যাশনাল মিডিয়া যাদুঘর, যুক্তরাজ্য
ব্রাডফোর্ডে অবস্থিত। এটি প্রথম ইউনেস্কো সিনেমা শহর, যদিও যাদুঘরটি পরিচিত ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ফটোগ্রাফি’ হিসেবে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে ৩.৫ মিলিয়ন সিনেমা সংক্রান্ত সামগ্রী, এর মধ্যে আছে বিশ্বের প্রথম স্থির চিত্র নেগেটিভ এবং টিভি ফুটেজ। এখানে দুইটি সিনেমা থিয়েটার আছে যেখানে প্রতি বছর বেশ কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাডফোর্ড আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর মধ্যে একটি। যাদুঘরটি জাতীয় বিজ্ঞান যাদুঘর গ্রুপের অংশ।



মন্তব্য চালু নেই