বিশ্বরাজনীতিতে নতুন গুরুত্বে বাংলাদেশ

চীনের বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ চুক্তির ফলে বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, চীনের ১৩.৬ বিলিয়ন বাণিজ্যিক চুক্তির ফলে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে ভাববেন। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অন্যান্য দেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতায নামবে।খবর ঢাকাটাইমসের।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুই দিনের ঢাকা সফরে শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস ফোরামে ১৩টি বাণিজ্য চুক্তি সই হয়, যার আর্থিক মূল্য ১৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং চীনের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর মধ্যে ১১টি বেসরকারি খাতের, আর দুটি সরকারি।

চীনের এমন চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার দাঁড়িয়েছে, তাতে চীন মনে করছে এখানে বিনিয়োগ করলে তারা লাভবান হবে। বাংলাদেশ তো বটেই।”

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক দোলোয়ার বলেন, “চীনের বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ চুক্তির ফলে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের অবস্থান (স্ট্যাটাস) বেড়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ যেকোনো বিষয়ে যেকোনো দেশের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারবে।’

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, “আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণে চীন বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বাড়াতে গেলে অন্য পরাশক্তি দেশগুলো সতর্ক হয়। তবে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগতভাবে চালাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অর্থনৈতিক।”

বিশ্বে কূটনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এই বার্তা অন্য শক্তিধর দেশগুলোকে নতুন করে ভাবাবে। তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে ওই সব বৃহৎ দেশগুলোকে দক্ষ কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে।”

জানতে চাইলে চীন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট কোন দেশে যাচ্ছেন, কি চুক্তি করছেন-এসবের প্রতিটি বিষয়ে সতর্ক পর্যবেক্ষণ রাখছে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন- এই তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা কী করছেন, তারা কোন দেশে কতটুকু সময় ব্যয় করছেন, তার সব কিছুই হিসাব রাখা হয়। সেদিক বিবেচনায় চীনা রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে এসেছেন দুই দিনের সফরে। এটি ইতিহাসে বিরল ঘটনা। একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধানের বাংলাদেশের মতো দেশে এত সময় অবস্থান আর কোনো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র দেখায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছিলেন। দেড় ঘণ্টা সময় অবস্থান করেছিলেন তিনি। সেদিক বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “জিনপিংয়ের এই সফরকে জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্ব- এই তিন প্রেক্ষাপটে চিন্তা করা যায়। প্রথমত, জাতীয়ভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে। আমাদের অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় যাবে। আঞ্চলিক দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়বে চীনের। সে ক্ষেত্রে ভারতের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ভারতও নতুন হিসাব-নিকাশ করবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বিশ্বরাজনীতিতে। সেখানে নতুন করে বিবেচিত হবে বাংলাদেশের গুরুত্ব। প্রভাবশালী দেশগুলো নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে।”



মন্তব্য চালু নেই