বিশ্বকাপে সেরাদের দুই তালিকায় ‘দুই ভায়রা’

অ্যাডিলেড ওভালে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের পঞ্চম ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে জিতলেই সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সুযোগ টাইগারদের সামনে। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯৯ রানে ৪ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ হঠাৎই ধুঁকছিল। এভাবে উইকেট পতনের মিছিল চলতে থাকলে বড় বিপদই ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের।

কিন্তু ‘দুই ভায়রা’ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দৃঢ়তায় সেই বিপদ কেটে ওঠে বাংলাদেশ। উইকেট আঁকড়ে রেখে রানের গতি সচল রাখেন তারা। দলকে গড়ে দেন শক্ত ভিত। ইতিহাস গড়েন মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বনে যান তিনি।

এদিকে ভায়রার সেঞ্চুরি উদযাপনের সাক্ষী হলেও নিজে সেটি পূর্ণ করতে পারেননি মুশফিক। চাইলে বোধ হয় বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কও সেঞ্চুরি পেতে পারতেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনে ব্যাট চালিয়েছেন সপাটে। যার দরুণ তার ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটে ৮৯ রানে। এতে মুশফিকের আফসোস করার কিছুই নেই! তার দল যে পেয়ে যায় অবিস্মরণীয় এক জয়।

ঐতিহাসিক সেই জয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। এই অর্জন দেশের ক্রিকেটে এবারই প্রথম। দুরন্ত মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, আর দুর্দান্ত বাংলাদেশ! শাবাশ বাংলাদেশ! বিশ্বকাপের টাইগারের মতোই খেলেছেন মাশরাফি অ্যান্ড কোং।

এর ঠিক পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা সেঞ্চুরি হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। এভাবে তার ব্যাট হেসেছে বেশ কয়েকবার। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পেতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। বিশ্বকাপের টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার প্রথম বাংলাদেশিও তিনি। বিশ্বকাপে টানা সেঞ্চুরিই করা ব্যাটসম্যান আর আছেন মাত্র সাতজন।

সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এর মধ্যেই তিনি বিশ্বকাপের সেরা দশ ব্যাটসম্যানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। নামের পাশে যোগ করেছেন ৩৬৫ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার করা অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংসটিই সেরা। বিশ্বকাপের ১১তম আসরে সর্বোচ্চ রান সংগহকদের তালিকায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবস্থান নয় নম্বরে।

তালিকার শীর্ষে রয়েছেন মার্টিন গাপটিল। তিনি করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৪৭ রান। আর ৫ ম্যাচে ৫৪১ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন শ্রীলঙ্কার গ্রেট ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। তৃতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিানয়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ ৮ ম্যাচে ৪৮২ রান।

এদিকে, রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা দশে জায়গা করে নিতে না পারলেও উইকেটের পেছনে মুশফিক ছিলেন অসাধারণ। খেলেছেন ৬ ম্যাচ। ৮টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি। এতে রয়েছে ১টি স্টাম্পিং ও ৭টি ক্যাচ। বিশ্বকাপের ১১তম আসরে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের তালিকায় মুশফিকের অবস্থানও নয় নম্বরে। যদিও উমর আকমল ও জস বালটার সমসংখ্যক ডিসমিসাল করেও তালিকার সপ্তম ও অষ্টম স্থানে রয়েছেন।

তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিন। ৮ ম্যাচে ১৬টি ডিসমিসাল করেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির নামের পাশে যোগ হয়েছে ১৫টি ডিসমিসাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক দিনেশ রামদিন রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে। ৭ ম্যাচে ১৩টি ডিসমিসাল করেছেন এই ক্যারিবিয়ান।

৯ ম্যাচে ১৩টি ডিসমিসাল করে নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক লুক রনকির অবস্থান চতুর্থ। সমান ১০টি ডিসমিসাল নিয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন স্কটল্যান্ডের উইকেটকিপার ম্যাথু ক্রস এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক।

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী সেরা দশ :

নাম                                ম্যাচ                            রান
মার্টিন গাপটিল                   ৯                               ৫৪৭
কুমার সাঙ্গাকারা                ৭                                ৫৪১
এবি ডি ভিলিয়ার্স               ৮                                ৪৮২
ব্রেন্ডন টেলর                     ৬                                ৪৩৩
শিখর ধাওয়ান                   ৮                                ৪১২
স্টিভেন স্মিথ                      ৮                                ৪০২
দিলশান                           ৭                                ৩৯৫
ডু প্লেসিস                         ৭                                ৩৮০
মাহমুদউল্লাহ                      ৬                               ৩৬৫
মিসবাহ-উল-হক                ৭                                ৩৫০

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল করা সেরা দশ উইকেটরক্ষক :

নাম                                ম্যাচ                   ডিসমিসাল
ব্র্যাড হ্যাডিন                      ৮                        ১৬
মহেন্দ্র সিং ধোনি                ৭                         ১৫
দিনেশ রামদিন                  ৭                         ১৩
লুক রনকি                        ৯                         ১৩
ম্যাথু ক্রস                         ৬                         ১০
কুইন্টন ডি কক                  ৮                         ১০
উমর আকমল                    ৭                          ৮
জস বাটলার                      ৬                          ৮
মুশফিকুর রহিম                  ৬                          ৮
কুমার সাঙ্গাকারা                  ৭                         ৮



মন্তব্য চালু নেই