বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াই

ভারত ও পাকিস্তান। ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। এ দুই দলের লড়াই মানেই দর্শকদের কাছে অন্যরকম এক আমেজ।

এ পর্যন্ত দুই দল ওয়ানডেতে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে মোট ১২৬ বার। যেখানে জয়ের আধিপত্যটা পাকিস্তানেরই বেশি। ১২৬ ওয়ানডের মধ্যে পাকিস্তান জিতেছে ৭২টি। পক্ষান্তরে ভারতের জয় ৫০টিতে। অপর চারটি ম্যাচের কোনো ফল হয়নি।

তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান একটি ম্যাচও জিততে পারেনি! ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট পাঁচবার। যার সবগুলোতেই ভারতের জয়জয়কার।

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের ৫টি ম্যাচ :

১৯৯২ বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় সেবার। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গ্রুপ পর্বের সে ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২১৬ রান করে ভারত। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন শচীন টেন্ডুলকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান আসে অজয় জাদেজার ব্যাট থেকে। পাকিস্তানের হয়ে মোস্তাক আহমেদ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন।

জবাবে মাত্র ১৭৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। আমির সোহেলের ৬২ ও জাভেদ মিয়াঁদাদের ৪০ রান ছাড়া তাদের আর কোনো ব্যাটসম্যানই তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। ভারতের পক্ষে কপিল দেব, মনোজ প্রভাকার ও জাভাগাল শ্রীনাথ নেন ২টি করে উইকেট। ভারত ম্যাচটি জেতে ৪৩ রানে।

১৯৯৬ বিশ্বকাপ : সেবার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। ঘরের মাঠে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৮৭ রান করে ভারত। শেষ ৪ ওভারে ৫৭ রান তোলে ভারত। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৩ রান করেন নভোজাত সিধু। এ ছাড়া অজয় জাদেজা ৪৫ রান করেন। পাকিস্তানের হয়ে ওয়াকার ইউনুস ও মোস্তাক আহমেদ ২টি করে উইকেট নেন।

জবাবে স্লো ওভার রেটের কারণে ১ ওভার কমে আসা ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৪৮ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। অথচ প্রথম ১০ ওভারেই বিনা উইকেটে ৮৪ রান করেছিল তারা! দলের পক্ষে ৪৬ বলে ৫৫ রান করেন অধিনায়ক আমির সোহেল। ভারতের হয়ে অনিল কুম্বলে ও ভেঙ্গটেশ প্রসাদ নেন ৩টি করে উইকেট। ৩৯ রানে ম্যাচ জেতে ভারত।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় সাক্ষাতের এই ম্যাচেও আগে ব্যাট করতে নামে ভারত। ম্যানচেস্টারে সুপার সিক্সের সে ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করা ভারত সংগ্রহ করে ২২৭ রান। দলের পক্ষে রাহুল দ্রাবিড় ৬১, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ৫৯ ও শচীন টেন্ডুলকার ৪৫ রান করেন। পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াসিম আকরাম ১০ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।

জবাবে ৪৫.৩ ওভারে পাকিস্তান অলআউট হয় ১৮০ রানে। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তৃতীয় জয় পায় ভারত। তৃতীয় জয়টা ৪৭ রানের। পাকিস্তানের ইনিংসে ইনজামাম-উল-হক ৪১, সাঈদ আনোয়ার ৩৬ ও মঈন খান ৩৪ রান করেন। ভারতের হয়ে মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট নেন ভেঙ্গটেশ প্রসাদ। এ ছাড়া ৩টি উইকেট জমা পড়ে জাভাগাল শ্রীনাথের ঝুলিতে।

২০০৩ বিশ্বকাপ : দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়ানে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুাখোমুখি হয় পাকিস্তান ও ভারত। এবার অবশ্য আগে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। টস জিতে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৭৩ রান করে ওয়াকার ইউনুসের দল। দলের হয়ে ১০১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ওপেনার সাঈদ আনোয়ার। ভারতের জহির খান ও অশিস নেহারা ২টি করে উইকেট নেন।

জবাবে শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটে ২৬ বলে হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় ভারত। অবশ্য মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন টেন্ডুলকার। ১২টি চার ও এক ছক্কায় ৭৫ বলে ৯৮ রান করেন তিনি। এ ছাড়া যুবরাজ সিং ৫০ ও রাহুল দ্রাবিড় ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুস ২ উইকেট নেন।

২০১১ বিশ্বকাপ : এবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। মোহালিতে সে ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৬০ রান করে ভারত। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন শচীন টেন্ডুলকার। বীরেন্দর শেবাগ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন। পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ নেন ৫ উইকেট।

জবাবে খেলতে নেমে ১ বল বাকি থাকতেই পাকিস্তানের ইনিংস থামে ২৩১ রানে। ২৯ রানের জয়ে ফাইনালে ওঠে ভারত। পাকিস্তানের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন মিসবাহ-উল-হক। এ ছাড়া মোহাম্মদ হাফিজ ৪৩ রান করেন। ভারতের হয়ে জহির খান, অশিস নেহারা, মুনাফ প্যাটেল, হরভজন সিং ও যুবরাজ সিং ২টি করে উইকেট ভাগ করে নেন।

এবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। বিশ্বকাপে এবার ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান তাদের জয়খটা কাটাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার!

তথ্যসূত্র : ক্রিকইনফো



মন্তব্য চালু নেই