বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকেও হারাতে পারি : মুশফিক

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ কন্ডিশন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য নতুন হলেও প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের কাছে পুরনো। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় সে মন্ত্রটা বেশ ভালো করেই জানেন মুশফিকদের প্রধান গুরু। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে মিরপুরের শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের অনুশীলনের সপ্তম দিনে তেমনটাই লক্ষ্য করা যায়। অনুশীলন শেষে দলের অন্যতম ক্রিকেট তারকা মুশফিকুর রহিমও তাই স্বীকার করে নিলেন।

মাশরাফিদের এমন ব্যাতিক্রম অনুশীলনে বেশ কিছু চমকও ছিলো। যা ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায়নি। সব মিলে কেমন অনুশীলন ছিলো এমন প্রশ্নে মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার উইকেটের কথা চিন্তা করেই ম্যাচ-পরিস্থিতি তৈরি করে অনুশীলন করেছি আজ (মঙ্গলবার)। যেমন চার ওভারে ২০ রান করতে হবে, কোনো উইকেট হারানো যাবে না। স্লগ ওভারে চার ওভারে ৩০ রান করতে হবে, পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান করতে হবে, এক উইকেট পড়লে আবার রানের লক্ষ্যটা বেড়ে যাবে, দুই উইকেট পড়লে রান আরো একটু বাড়বে। এভাবে ম্যাচের পরিস্থিতি তৈরি করে অনুশীলনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই অনুশীলনে বেশির ভাগ সময় ব্যাটসম্যানরাই জিতেছে। শেষ দিকে বোলাররাও ভালো করেছে। সব মিলিয়ে আজকের অনুশীলনটা দারুণ হয়েছে।’

অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে বাংলাদেশ দলের ভালো করার সামর্থ্য কতটুকু আছে এমন প্রশ্নে টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘অনেক দূর যাওয়ার সামর্থ্য আছে। আমাদের দলে বেশ কয়েকজন পারফর্মার এখন। সবাই যদি ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারি। আসলে সামর্থ্যের কথা এভাবে বলা যায় না। আমরা দ্বিতীয় রাউন্ড কেনো, আরো তো বেশি দূরে যেতে পারি। তবে প্রাথমিক লক্ষ্য অবশ্যই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া। ইনশাল্লাহ আমরা তা পারবো। আমাদের জন্য প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। দলের সবাই ভালো করতে প্রস্তুত। খেলার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে।’

অস্ট্রেলিয়ার বড় মাঠে বাংলাদেশ দল কি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানেও মাঠ বড় করে খেলেছি। আজকের (মঙ্গলবার) অনুশীলনে ৮৫ থেকে ৯০ গজ পর্যন্ত সীমানা বাড়ানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সীমানাগুলোও এমন। এখানে আমরা আজ প্রথমবার ম্যাচ-পরিস্থিতিতে অনুশীলন করেছি। মাঠের বিষয়গুলো ভেবে আমাদের খেলতে হবে। সে সব বিষয় আমাদের চিন্তায় আছে। অস্ট্রেলিয়াতে মাঠ এক রকম, আবার নিউজিল্যান্ডে গেলে অন্য রকম হবে। অনেক আগে থেকেই এসব নিয়ে আমরা ভেবেছি। আমাদের কোচ অনেক দিন অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করেছেন। তিনি আমাদের এ সব বিষয়ে বলেছেন। এখন পরিকল্পনাগুলো মাঠে প্রয়োগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দলগুলো এখনও যখন খেলার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ তখন অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে না থেকে অনুশীলন করেই বিশ্বকাপে কতটা ভালো করা সম্ভব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। বিশ্বকাপ অনেক বড় টুর্নামেন্ট। পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে অনেক দিন সময় লাগে। দীর্ঘ দিন খেললে খেলোয়াড়রা ইনজুরিতে পড়তে পারে, ক্লান্তি আসতে পারে। সে দিক থেকে অন্য ভাবে ভাবতে পারি আমরা। আমরা এখানে ভালোই অনুশীলন করছি। যদি এমন হতো, আল্লাহ না করুক, আমরা খেললাম; কিন্তু চার পাঁচজন কোনো স্কোরই করলো না। তাহলে নিশ্চয় ভালো হতো না। অনুশীলন নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। এরপর আমরা আরো দুই সপ্তাহের সময় পাবো। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবো, সব মিলিয়ে আমরা দারুণ কিছুই করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

ভিন্ন কন্ডিশনে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারবে। অথচ নিজের মাঠে ২০১১ সালে ৫৮ রানের লজ্জাও আছে বাংলাদেশের। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কি মত? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাদের ভালো যায়নি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে আমরা দারুণ খেলেছি। দল যাই হোক না কেনো বা সাফল্য যে ফরম্যাটেই আসুক না কেনো। যে কোনো দলের বিপক্ষে জিততে হলে সেরা ক্রিকেট খেলতে হয়। ওদের চেয়ে আমরা বেশি চাপে ছিলাম। যদিও দেশের কন্ডিশনে খেলা। ওদের সাথে জিতলে আমাদের কোনো ক্রেডিট হয় না। কারণ সাধারণত ওরা আমাদের চেয়ে কম শক্তির দল। তবে ওদের সাথে হারলে অনেক কিছু হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে ওদের সাথে ৮-০ ব্যবধানে জয় বিশাল ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ভালো খেলেছে। সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগে খেলাও সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জটা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কন্ডিশনটা অনেক বড় বিষয়। কারণ যেখানে খেলা হবে, সেখানকার আবহাওয়া- পিচ দেখে খেলতে হবে। বোলিং- ব্যাটিং বা ফিল্ডিং সব কিছুই অনেক চিন্তা করে করতে হবে। বিশেষ করে প্রথম দশ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, সব দলের জন্যই কঠিন হবে। আমাদের প্রথম দশ ওভার এমনভাবে খেলতে হবে, যাতে করে আক্রমণে যাওয়ার সামর্থ্য আমাদের থাকে। শর্ট বল নিয়ে কথা হচ্ছে, আসলে বিশ্বকাপের কন্ডিশনে ধারাবাহিকভাবে বাউন্স হবে। ফলে ব্যাটসম্যান সেট হয়ে গেলে রান তোলা সহজ হবে। আমাদের উইকেটে এক বল বাউন্স করলে পরের বল ধীরে আসে, ফলে সমস্যাটা বেশি হয়।

অর্থাৎ আমাদের কষ্ট হবে আবার ভালো সুযোগও আছে। অনুশীলন সেভাবেই চলছে, এখন প্রয়োগের ব্যাপার। স্পিনারদের জন্য পরিস্থিতি হয়তো একটু প্রতিকুলে থাকবে, কিন্তু প্লাস পয়েন্ট থাকবে; যেমন মাঠ বড় থাকবে, এ ছাড়া বিদেশি বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই স্পিনে দুর্বল। সব মিলিয়ে বোলিং বিভাগটাতে গুরুত্ব দিতে হবে। পেসারদের বেশি দায়িত্ব থাকবে। স্পিনারদেরও অনেক দায়িত্ব থাকবে। পেস ও স্পিনের মিলিত কাজটা ভালো হলে, টপ অর্ডার ভালো ব্যাটিং করলে যে কোনো দলের বিপক্ষে আমরা দারুণ কিছু করতে পারি; এমন কি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুশফিক: অবশ্যই আছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে খেলা বলে সবাই কন্ডিশন নিয়ে অনেক কথা বলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক খেলাগুলো দেখলে বোঝা যাবে যে, স্পিনাররা খারাপ করেনি। নিউজিল্যান্ডেও শ্রীলংকা দলে তিনজন স্পিনার খেলছে। অস্ট্রেলিয়ায় এখন মৌসুমের শেষ সময়। তাদের উইকেটগুলো খুব বেশি সিমিং বা বাউন্সি নাও হতে পারে।

যদিও ওদের উইকেটে বাউন্স একটা প্রাকৃতিক বিষয়। সেখানে পেসাররা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্পিনারদেরও অনেক বড় দায়িত্ব থাকবে। আমাদের শক্তির জায়গা স্পিন। সুতরাং আমাদেরও বিশেষ পরিকল্পনা আছে। বোলিং ওপেনিংয়ে স্পিনারদের কাজে লাগানো হতে পারে। এ ছাড়া সামনে আরো দুই সপ্তাহ সময় পাচ্ছি। সুতরাং আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কন্ডিশন বিবেচনায় অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। কে কোথায় ব্যাটিং করবে বা বোলিং করবে, এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরো দুই সপ্তাহ সময় পাচ্ছি আমরা।’



মন্তব্য চালু নেই