বিমান হাইজ্যাক রুখতে প্রাণ দিয়েছিলেন যে এয়ার হোস্টেস

সবচেয়ে বিখ্যাত ভারতীয়। বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে অনেকগুলো মুখ। তাঁরা কেউ ক্রিকেটার, কেউ ফিল্মস্টার, কেউ রাজনীতিবিদ, আবার কেউ শিল্পপতি। কিন্তু সেই সব মুখের ভিড়ে কখনও কি চেনা লাগে জনৈক আন্নাদুরাই বা রাজেশ কুমারকে? অটোচালক আন্নাদুরাই তাঁর যাত্রীদের জন্য রেখেছেন বিনামূল্যে মোবাইল চার্জার, ওয়াইফাই, সংবাদপত্রের ব্যবস্থা। দিল্লির অতি সাধারণ ব্যবসায়ী রাজেশ কুমারের দিনের একটা বড় অংশ কাটে মেট্রো রেলের ব্রিজের নিচে গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায়।

শুধু আন্না বা রাজেশ নন, খুঁজলে দেশের নানা প্রান্তে পাওয়া যাবে এ রকম অনেকগুলো মুখ। যাঁরা খ্যাতির লড়াইয়ে কয়েক শোজন পিছিয়ে থেকেও লোকচক্ষুর আড়ালে নিজেদের কাজে অগ্রগণ্য। আমরা আলোকপাত করব এমনই কয়েক জনের ওপর। আজ সামনে এলেন নীরজা ভানোট।

১৯৬৩ সালে চণ্ডীগড়ে জন্মগ্রহণ করেন নীরজা। বাবা হরিশ মুম্বইয়ে সাংবাদিকতার কাজ করতেন। চণ্ডীগড়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পর মুম্বইয়ে চলে আসেন তিনি। গ্র্যাজুয়েশন করেন সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে। ১৯৮৫-তে মাত্র ২২ বছর (এখনকার তুলনায় বেশ ছোট বয়সেই) বয়সে বাবা-মার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান তিনি। তবে বিয়ের পর থেকেই ক্রমাগত পণের জন্য চাপ দেওয়ায় স্বামীকে ছেড়ে মুম্বাইয়ে চলে আসেন তিনি। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে প্যান অ্যাম সংস্থায় এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। কাজটি পেয়েও যান তিনি। তবে মাত্র বছর খানেকের মধ্যেই এক কলঙ্কিত দিন ঘনায় তাঁর জীবনে।

৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ প্যান অ্যামের বিমান ফ্লাইট ৭৩ করাচিতে হাইজ্যাকারদের কবলে পড়ে। কিন্তু বিমান ছিনতাই যতটা সহজ হবে বলে ভেবেছিল দুষ্কৃতীরা, ততটা সহজ হয় না। যাত্রীদের বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখে ৪ জন সশস্ত্র হাইজ্যাকারদের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন নীরজা। মূলত তাঁর চেষ্টাতেই প্লেন নিয়ে উড়ে যেতে পারেনি বিমান ছিনতাইকারীরা। পণবন্দি যাত্রীদের বাঁচাতেও আপ্রাণ চেষ্টা করে যান নীরজা।

প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে বাধা পাওয়ায় গুলি চালাতে শুরু করে সন্ত্রাসবাদীরা। তিনটি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান নীরজা। তবে মারা যাওয়ার আগে ৩৬০ জন যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে যান তিনি। সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন অশোক চক্র, মার্কিন সরকার দিয়েছে ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন হিরোইসম অ্যাওয়ার্ড। তিনি পুরস্কার পেয়েছেন পাকিস্তান ও কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও। ২০০৪-এ অসম সাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারতীয় ডাক বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই