বিমানবন্দর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন সঙ্কটে সরকার

নিরাপত্তার অজুহাতে ঢাকা থেকে সরাসরি পণ্যবাহী বিমান (কার্গো) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন। এবার নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি পর্যালোচনা করতে ঢাকা আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। এ মাসের শেষ নাগাদ এ সফর হতে পারে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়।

নিরাপত্তা ঘাটতির যে অভিযোগ অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিরা সফরে এসে সন্তোষজনক নয় বলে অভিমত দিলে একই নিষেধাজ্ঞার খড়গ আসতে পারে ঢাকা থেকে সরাসরি পণ্যবাহী বিমান চলাচলে।

এদিকে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ এও বলেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হলে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সরাসরি চিঠি লিখেছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনও।

গেল বছরের ১৯ ডিসেম্বর একই অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্যবাহী বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অস্ট্রেলিয়া।

মিশরের আকাশে বোমা বিস্ফোরণে রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের পর বিশ্বের ২০ দেশের ৩৮ বিমানবন্দরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অষ্ট্রেলিয়া। সে তালিকায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।

পণ্যবাহী বিমান চলাচলে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপে উদ্বেগ জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ, ঢাকা চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। তারা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চেয়ে বলেছে, বিলম্বে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে পণ্যবাহি বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিমানবন্দরে বৈঠক করেছেন বিমানমন্ত্রী। এরপর মন্ত্রণালয়ে এবং সর্বশেষ রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন ঢাকাস্থ যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল। এতে অংশ নেন বেসামরিক বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব।

বৈঠকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা উন্নয়নে মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির পরবর্তী সভা হবে আগামী ২০ মার্চ।

পণ্যবাহী বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলামেইলকে বলেন, নিষেধাজ্ঞায় সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রশ্ন তুলেছে এবং যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে তার অনেকগুলো পূরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে। তিনি আশা করেন শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে দেশটি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা-লন্ডন কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে এখন বিষয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে। তারা আসবেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করতে। তাদের নিষেধাজ্ঞা হবে বেশি ক্ষতিকর।’

রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ভুক্ত দেশগুলোতে। তাই ইইউর নিষেধাজ্ঞায় কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬শ’ টন মালামাল পরিবহন করা হয়।

এদিকে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ সরাসরি তত্ত্বাবধানে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে অফিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেসামরিক বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পরিস্থিতি উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন মন্ত্রী।

পণ্যবাহী বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞা জটিলতায় রোববার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সানাউল হককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই পদে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন এয়ারভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী। কিন্তু বহাল আছেন বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। বিমান ও বিমানবন্দরের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই