আর্মড পুলিশের বিশেষায়িত টিম

বিমানবন্দরে ‘সিআরটি’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের বিশেষায়িত একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের নাম রাখা হয়েছে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমি এবং সম্ভাব্য নানা নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনায় নিয়ে গঠন করা এই টিম তাদের কাজও শুরু করেছে।

দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, সুঠাম দেহের অধিকারী, দক্ষ ৫০ জন সদস্য নিয়ে এই টিম গঠন করা হয়েছে। এর দলনেতা হিসেবে রয়েছেন সদ্য ভারত থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন।

গোয়েন্দাসূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে দেশি-বিদেশি কোনো অশুভ গোষ্ঠি শাহজালাল ও শাহ আমানত এই দুই আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় মাথায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর আগে দুই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে গোয়েন্দা সংস্থা।

এমন অবস্থায় হযরত শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। এর অংশ হিসেবেই টিকিট কেটে যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা যে ক্যানোপির ভেতরে প্রবেশ করতেন সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। লক্ষ্য করা যায়, ক্যানোপির ভেতর আগে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই পুলিশ ডিউটি পালন করতো। কিন্তু নিরাপত্তা বৃদ্ধির পর বিমানবন্দরের সকল স্পর্শকাতর স্থানসহ প্রায় সকল স্থানে অস্ত্র নিয়ে ডিউটি পালন শুরু করে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। একই সঙ্গে বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের উপর জোর নজরদারিও চলতে থাকে। এই নজরদারি এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, ২০১০ সালের জুনে শাহজালালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার পাশাপাশি চোরাচালান রোধেও কঠোর ভূমিকা পালন করে আসছে তারা। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে আর্মড পুলিশ দেশি-বিদেশি যাত্রীদের বিশেষ পুলিশিং সেবা দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়ায়।4

চোরাচালানের পণ্য আটকে সারা বাংলাদেশে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরবও অর্জন করে। প্রতিষ্ঠার পর মাত্র কয়েক বছরে একের পর এক অর্জন করে চলেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্রস্তাবে বলা হয়, সিআরটি হতে পারে অনেকটা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট-এর আদলে। বিমানবন্দরে হামলা হলে কিংবা যাত্রীদের জিম্মি করার মতো কোনো ভয়ংকর ঘটনা ঘটলে যেন দ্রুত তা মোকাবেলা করা যায় সেজন্যই এমন একটি টিম গঠন আজকের দেশীয় ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর এজন্য এই টিমকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করার কথাও বলা হয় প্রস্তাবে।

এই প্রস্তাবের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যথারীতি সম্মত হওয়ার পর এই টিম আলোর মুখ দেখে। এখন এটি কাজও শুরু করেছে। গত ২২ মার্চ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সফল মিশন শেষে বাংলাদেশ টিম দেশে আসে। ওই দিন বিমানবন্দরে হাজারো জনতার ঢল নামে। এই অতিরিক্ত মানুষের চাপের মধ্যে পরিস্থিতি সামল দিতে প্রথম মাঠে নামে এই ইউনিট। প্রথম দিনে বিমানবন্দরে নতুন ইউনিটের দায়িত্বপালন দেখে অনেকেই প্রশংসা করেন।

সিআরটির দলনেতা আলমগীর হোসেন জানান, একদল চৌকস, দক্ষ, দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং বয়সে তরুণ সদস্য নিয়ে এই টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম টাস্ক ওরিয়েন্টেড কাজ করবে। আর যে কোনো ধরনের ক্রাইসিস মোকাবেলায় ‘ড্রাইভ অ্যান্ড হান্ট’ পদ্ধতিতে অভিযান পরিচালনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে সিআরটি।



মন্তব্য চালু নেই