বিপর্যয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে বালুক্ষয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমুদ্রসৈকত অন্তত ২৫ থেকে ৩০ ফুট ভেঙে গেছে। ফলে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার মানচিত্র।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভূমিক্ষয়ে একদিকে যেমন পাল্টে যাচ্ছে কুয়াকাটার মানচিত্র, অপরদিকে সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনকারী নারিকেলকুঞ্জ, শালবন, ঝাউবাগানসহ সৈকত লাগোয়া বনাঞ্চল সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য সেজে থাকা সৈকতের কয়েকটি স্পট লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সৈকত তটে থাকা ঝাউবন, নারিকেলকুঞ্জ, তালবাগান, শালবনসহ শুঁটকিপল্লী তছনছ হয়ে গেছে। সৈকতঘেঁষা বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ উপড়ে যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এভাবে ভূমিক্ষয় অব্যাহত থাকলে কুয়াকাটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ভিতরে পানি প্রবেশ করে পর্যটন শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এতে পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে ও পর্যটকশূন্য হয়ে যাবে কুয়াকাটা- এমনটাই আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। সরকারও পর্যটন শিল্প থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে- এমনটাই দাবি করছে রাজস্ব বিভাগ।

কুয়াকাটার জিরোপয়েন্ট থেকে পশ্চিমে খাজুরা ও পূর্বদিকে গঙ্গামতি পর্যন্ত বনবিভাগের সৃজিত বাগানের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীনের পথে। কুয়াকাটার জিরোপয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে খাজুরা বেড়িবাঁধটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বসবাস করছে বাঁধটির পাশে। বাঁধটি ভেঙে গেলে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হবে। পশ্চিম খাজুরার বাঁধটি কয়েক দফায় ভাঙছে আর সরকার দফায় দফায় মেরামত ও ব্লক দিচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দ্রুত এর স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা নিয়ে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে তা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।

হোটেল সী-কুইন মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সমুদ্রসৈকত বিলীন হয়ে গেলে কুয়াকাটাই অন্ধকার হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে এ সমুদ্রসৈকত রক্ষায় দ্রুত পদপেক্ষ নিতে হবে।’

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে এক কিলোমিটার জিওটিউবের একটি ডিজাইন কাজ চলছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।



মন্তব্য চালু নেই