বিদায় ঘন্টা বাজতে চলছে ডেবিট কার্ডের!

এটিএম বুথে ডেবিট কার্ডের বদলে ব্যবহার করা হবে স্মার্টফোন।সম্প্রতি দেশের কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস (গ্রাহকের কার্ডের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরির যন্ত্র) ব্যবহার করে কার্ড জালিয়াতির ঘটনা নিশ্চয়ই শুনেছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা প্রথমবার জানা গেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে ডেবিট কার্ডের বিকল্প নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছিল আগেই। আজ বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এটিএম বুথে ডেবিট কার্ডের বিকল্প হিসেবে স্মার্টফোনের ব্যবহারের বিষয়টি উঠে এসেছে। এটিএম বুথে ডেবিট কার্ডের বিকল্প হতে পারে স্মার্টফোন।

বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে দ্রুত ও অধিক নিরাপদে অর্থ লেনদেনের জন্য স্মার্টফোন প্রযুক্তি দিয়ে কার্ডবিহীন অটোমেটিক টেলার মেশিন (এটিএম) ব্যবহার হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এক ডজনেরও বেশি ব্যাংক পুরোনো এটিএম মেশিনের বদলে নতুন এটিএম মেশিন বসাচ্ছে এবং গ্রাহকদের ডেবিট কার্ডের বদলে স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশন ও কোড স্ক্যানিং পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ করে দিচ্ছে। ওয়েলস ফার্গো, ব্যাংক অব আমেরিকা, চেজের মতো ব্যাংকগুলো নতুন এটিএম মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিএম মেশিন নির্মাতা ও
লেনদেনবিষয়ক সফটওয়্যার নির্মাতারা চাহিদা মেটাতে উঠে পড়ে লেগেছে।

এটিএম প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এফআইএস গ্লোবালের প্রধান ডগ ব্রাউন দাবি করেন, ‘আমাদের যে মডেল তাতে আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক কম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি ব্যাংকের দুই হাজারের বেশি এটিএম মেশিনে কার্ডবিহীন পদ্ধতির লেনদেন এফআইএস সিস্টেমে চলছে যা শিগগির আরও বাড়বে। আগামী দেড় বছরে উত্তর আমেরিকায় ৮০ হাজার যন্ত্র দরকার হবে। এ রকম পরিবর্তন অন্যান্য দেশেও আসবে।’

স্কিমিং প্রতারণা কমাতে পারে স্মার্টফোন
স্কিমিং ডিভাইস বা গ্রাহকের কার্ডের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরির যন্ত্র ব্যবহার করে জালিয়াতির ঘটনা বাড়ছে। স্মার্টফোন ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে লেনদেন যেমন দ্রুত হবে তেমনি স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির ঝুঁকিও কমবে।

গবেষকদের দাবি, স্কিমিংয়ের ফলে বৈশ্বিক ব্যাংক শিল্প ২০১৫ সালে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্কিমিং করে কার্ডের তথ্য চুরির করে অর্থ জালিয়াতি ছাড়াও আরও নানা প্রতারণা করতে পারে দুর্বৃত্তরা।

ডগ ব্রাউন বলেন, ‘গ্রাহকেরা এটিএম বুথে কার্ডের তথ্য চুরির বিষয়টিতে সচেতন। তাই স্মার্টফোনে কার্ডবিহীন পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়াটিকে তারা স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়া কার্ড দিয়ে লেনদেন করতে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড লাগে সেখানে এ পদ্ধতিতে ১০ সেকেন্ড সময় লাগবে। এ ছাড়া হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি অধিক সুরক্ষিত।’

ব্যাংক অব আমেরিকার মুখপাত্র বেটি রেইজ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নতুন কার্ডবিহীন এটিএম সলিউশন উন্নয়নে কাজ করছে। এ পদ্ধতিতে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন বা এনএফসি পদ্ধতি ব্যবহার করে কার্ডবিহীন উপায়ে গ্রাহককে শনাক্ত করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ব্যাংকগুলো কার্ডবিহীন উপায়ে মোবাইল লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

কিছু নতুন এটিএম মেশিন আছে যেগুলো শুধু সফটওয়্যার হালনাগাদ করলেই মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। কিছু যন্ত্রে নতুন হার্ডওয়্যার বসাতে হবে।

এটিএম নির্মাতা ডাইবোল্ড সম্প্রতি একটি ‘মাথাহীন’ টেলার মেশিন তৈরি করছে যাতে কোনো স্ক্রিন বা কিপ্যাড থাকবে না। এটি কেবল মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ বের করবে। নতুন প্রযুক্তি প্রসঙ্গে ডাইবোল্ডের জ্যেষ্ঠ ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক ডেভ কুচেনেস্কি বলেন, ‘আমরা পিন প্যাড, কার্ড রিডারের কথা ভুলে যেতে বলছি। কারণ আমাদের সবার পকেটে এখন স্মার্টফোন। গ্রাহকদের কেবল তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে হবে। মোবাইল ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার কিংবা মেশিনে বসানো আইরিশ স্ক্যানার বা চোখ স্ক্যান যন্ত্রের সাহায্যে এটা সম্ভব।’

ডাইবোল্ডের কর্মকর্তা কুচেনেস্কি আরও বলেন, সিটিব্যাংকের সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ডাইবোল্ড, যা ব্যবহারকারীকে উন্নত অভিজ্ঞতা দেবে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে আর কার্ডের ঝামেলায় যেতে হবে না। অর্থ লেনদেনের জন্য রশিদ প্রিন্ট করার যন্ত্র বসানো লাগবে না। এতে ব্যাংকগুলোর খরচ কমবে। তথ্যসূত্র: এএফপি।



মন্তব্য চালু নেই