বিজেপির ঘাড়ে চড়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন চাইবে বিএনপি

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিরঙ্কুশ বিজয়ে অনেকটাই নির্ভার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আগামী ২১ মে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিএনপির ভারত বিদ্বেষী মনোভাব জলাঞ্জলি দিয়েছে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুক্তি হিসেবে তারা ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেসের সুসম্পর্কের কথা বলেন। তাদের দাবি, কংগ্রেসের ওপর ভর করেই এতোদিন ক্ষমতা ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। সেই সঙ্গে হাসিনা সরকারের জোর কমে যাবে। আর বিএনপি চাইবে যে করেই হোক মোদি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে হাসিনাকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে। আর নির্বাচন হলেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসবে।

বিএনপি নেতারা বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ না দেয়ায় একটা বৈরি সম্পর্ক তৈরি হয় কংগ্রেসের সঙ্গে। তা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিএনপি। যার খেসারত দিতে হয় গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। শুধুমাত্র কংগ্রেসের সমর্থনের কারণেই শেখ হাসিনা এককভাবে নির্বাচন করে উতরে যান। এরপর থেকেই বিএনপি নেতারা এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনও ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন।

কিন্তু কংগ্রেসের ভরাডুবিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তার ভিত্তি হতে হবে সমমর্যাদার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক দেশেই একাধিক দল রয়েছে। এক এক দলের সঙ্গে এক এক দলের সুসম্পর্কও রয়েছে। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের কংগ্রেস সরকারের একটা সুসম্পর্ক ছিল। তারা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে না পারায় তা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্যও এক রকম পরাজয় বটে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে চায়। তবে অবশ্যই সমমর্যাদার ভিত্তিতে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, ‘বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক না থাকায় তারা দেশি-বিদেশিভাবে চাপের মুখে পড়বে। সেই সুযোগটিই এখন বিএনপিকে নিতে হবে।’ মোদি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। পরিবর্তন অনিবার্য। মোদি না এলেও হতো, তবে তিনি ক্ষমতায় আসাতে একটু তাড়াতাড়ি হবে। মোদি নির্বাচনে জিতায় শুধু বাংলাদেশ নয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হবে।’

ভারতে সরকার পরিবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন আনবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সরকারের পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। মোদির দল সরকারে আসায় তারাও তাদের নিজস্ব নীতিতে চলবে। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সখ্যতা ছিল। পরে দেশাই জিয়াউর রহমানের ভক্ত হয়ে পড়েন। আবার ইন্দিরা গান্ধী আসেন ক্ষমতায় এরশাদ সাহেবও এদেশের ক্ষমতায় আসেন। এখন সোনিয়া নাই হাসিনার কি হয় তাই দেখার বিষয়।’

হাসিনার জয় কংগ্রেসের পতনের অনেকগুলো কারণের একটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস যে কত বদমাশ তা বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। একটি খুনি সরকারকে কংগ্রেস সমর্থন দিয়েছে। তাদের যে পরিনতি হবার তাই হয়েছে। এখন হাসিনার কি পরিনতি হয় তাই দেখার অপেক্ষায় আছি।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ হচ্ছে সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে। এ বিষয়ে আওয়ামী সরকার প্রতিবাদ না করে ব্যর্থ হলেও বিএনপি হবে না। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো আমরা।’



মন্তব্য চালু নেই