বিএনপি জোটে শরিকে শরিকে লড়াই !

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অনেক শরিকদলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! শরিকদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট দলের কেউ কেউ বিএনপিকে জোট পুনর্গঠনের পরামর্শও দিচ্ছে। জোটের বৈঠকে এমন প্রশ্ন ও পরামর্শ আসায় অনেক শরিকদলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের একাধিক শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার‌্যালয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে জোটের মহাসচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কয়েকটি শরিকদলের চেয়ারম্যানও (শীর্ষ নেতা) উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইউপি নির্বাচনে জোটের সমন্বয় নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত না নিলেও সংবাদ সম্মেলনে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে বৈঠকে জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির মহাসচিবের কাছে জোট পুনর্গঠনের দাবি করেন।

ইরান বলেন, “জোটের অনেক শরিক দলের কর্মসূচি নেই। অনেকের অফিস নেই। জোটের বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনেই শুধু অনেককে দেখা যায়, যা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই এসব দলকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনে বিএনপির সহযোগিতা করা দরকার।”

এ সময় তিনি নিজের পার্টি থেকে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী রাখারও কথা বলেন।

তবে মির্জা ফখরুল তার এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। আর জোটের শরিকরাও কোনো প্রতিবাদ করেনি।

বৈঠক শেষ হওয়ার পর এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। জোটের স্বার্থ রক্ষার জন্য এ নিয়ে কেউ কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। তবে প্রকাশ্যেও কেউ কথা বলেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জোটের এমন একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সবার উচিত নিজের অবস্থান বুঝে কথা বলা। বৈঠকে তিনি (ইরান) যেভাবে কথা বলেছেন, সেটা অহংকারী আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্য দলের অফিস নেই বলে অভিযোগ করলেও এক বছরে তিনবার নিজ দলের অফিস বদল করেছেন ওই নেতা।”

তবে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ইরান তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কাছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ইরান বলেন, “আসলে বলার ভঙ্গিটা যেভাবে মনে করা হচ্ছে, তেমন ছিল না। আমার বক্তব্য ছিল কিছু কিছু দলের কর্মসূচি, কার‌্যালয় না থাকায় অনেক সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে লজ্জায় পড়তে হয়। সে কারণে এসব দলকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনে বিএনপিকে সহযোগিতা করার জন্য বলেছি। এতে দোষের কী হলো?”

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চার দল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সে প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয় নতুন ৯টি দল। চারদলীয় জোট উন্নীত হয় ১৪-দলীয় জোটে। আন্দোলনের একপর্যায়ে যোগ হয় আরও চারটি দল। পরে ১৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দলে।

তবে আকারে-প্রকারে সবচেয়ে বড় জোট হলেও বেশ কয়েকটি দল প্যাডসর্বস্ব ও ব্যক্তিনির্ভর বলে অভিযোগ আছে। জামায়াতসহ ১০টি দলের নেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন। সাংগঠনিক কাঠামো নে্ই অনেকের। সাংগঠনিক ভিত তৈরির উদ্যোগও নেই তাদের মধ্যে। এ ছাড়া রাজপথের আন্দোলনেও এসব দলের তৎপরতা ছিল না বললেই চলে। এসব নিয়ে জোটের ভেতরে-বাইরে নানা সময় সমালোচনাও হয়েছে।

শরিকদলের নেতাদের সমালোচনার জবাবে ইরান তাদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, “যারা এমন কথা বলছে তাদের জিজ্ঞাসা করুন এত সামর্থ্য থাকলে পৌরসভা, ইউপি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী নেই কেন। দুই নির্বাচনেই লেবার পার্টির প্রার্থী দিয়েছে।”

২০ দলের মহাসচিবদের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কার কী রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, তা সবার জানা আছে। কার অফিস আছে কি নেই, সেটা নিয়ে কথা বলার আগে সবার নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।”

আর জোটে থাকা নিবন্ধিত একটি দলের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কে নিবন্ধিত আর কার নিবন্ধন নেই, সেটা দেখছি না। কিন্তু কেউ যদি অন্যদের সম্মানহানির চেষ্টা করে, সেটা দুঃখজনক। এটা কারও কাম্য নয়। আমরা কাজ অনুযায়ী মূল্যায়ন চাই।” ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই