বিএনপি কাঁপছে এজেন্ট বিতর্কে!

বিএনপি’র অনেক নেতাই নিজেদের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে নাম ধরে বলছেন, ‘অমুকে সরকারের এজেন্ট, অমুকে ওই সংস্থার এজেন্ট’। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়েও দলের ভেতরে নানা সমালোচনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ গোলমেলে পরিস্থিতিতে রয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি।  দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরস্পরের প্রতি নেতাদের এ ধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাসের বিষয়টি অজানা নয় খোদ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। কারও কারও বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগও আসছে বিএনপি-প্রধানের কাছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের এ আস্থাহীনতায় তৃণমূলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। আগামী দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলনে এ ধরনের নৈরাশ্যবাদী (ফ্রাস্টেশন) অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে দল চরম বিপর্যয়ে পড়বে।  ২০ এপ্রিল এক মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে নিম্ন আদালত থেকে জেলে পাঠানো হয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে। একই মামলায় স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও নানা ‘মুখরোচক’ মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। আব্বাসবিরোধী নেতারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে জামিন নেওয়া হয়েছে। আব্বাসই মূলত সরকারের ‘এজেন্ট’। আবার আব্বাস সমর্থক নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতেই সরকারের প্রভাবে দ্বিধাবিভক্ত রায় এসেছে। এ রায়ে তারাও স্তম্ভিত। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে মুক্তি পান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ। গ্রেফতার হওয়ার আগে সরকারের বিরুদ্ধে এসব নেতার মুখে তীব্র সমালোচনার ঝড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কারামুক্তির পর ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া বাকি সবাই একেবারেই চুপসে যান। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা বক্তব্য শোনা যায়। নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, কারাগার থেকে বের হওয়া নেতারা সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা করেই বের হয়েছেন। তাই তারা চুপসে গেছেন। দলের ভেতরে থাকা ব্যারিস্টার মওদুদবিরোধীদের মুখে এও শোনা গেছে, সরকারবিরোধী বেশি কথা বললে মওদুদের গুলশানের বাড়িটিও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই ব্যারিস্টার মওদুদ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। একেবারেই চুপসে গেছেন। এমনকি প্রবীণ এই আইনজীবী রাজনীতি থেকে পুরোপুরি অবসরে যাবেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে দলের ভেতরে-বাইরে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় এখন সাবেক আমলাবেষ্টিত। বিএনপির মূল রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও তারাই। অনেক ক্ষেত্রে তারা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তও নেন।  প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনেকটাই ‘নামকাওয়াস্তা’। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এমন কথাই সাফ জানিয়েছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও গুলশান কার্যালয়ের ওইসব কর্মকর্তার কাছ থেকেই তাদের শুনতে হয় বলে জানান একাধিক সিনিয়র নেতা।  জানা গেছে, গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের একবার সালাম দিয়েও অনেক কেন্দ্রীয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা নিজেকে ধন্য মনে করেন। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করার আগে দফায় দফায় ধরনা দিতে হয় তাদের কাছে। অথচ ২০-৩০ বছর ধরে মাঠের রাজনীতিতে তারাই হলেন বিএনপির প্রাণশক্তি। সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে জেলা পর্যায়ের আন্দোলন ছিল উল্লেখ করার মতো। শহীদ জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করে আসা অনেক নেতাকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয় অরাজনৈতিক এসব কর্মকর্তার হাতে। ওই কার্যালয়ের কারও কারও পোশাক-আশাক, চালচলনে মনে হয়, এখনো তারা সরকারের সুবিধাভোগী। এ নিয়ে গুলশানে আসা নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নানা ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। অথচ এ কার্যালয়ে আসার আগে তাদের চেহারা ছিল ভিন্ন।  পত্রিকাটি জানায়, কার্যালয়ে আসা অনেক নেতা-কর্মীর মুখে শোনা যায়, এ অফিসের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি বর্ধিত অংশ। সেখানে ডাক না পড়লে সিনিয়র কোনো নেতা যান না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বেগম জিয়াকে কোনোমতে একটি সালাম দিতে পারলেই খুশি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে মাঠের সত্য কথা বলতে পারেন না। কারণ তা মুহূর্তেই চলে যায় কার্যালয়ে বাইরে। এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলেও। বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলেও বেশ কয়েক ধাপ আটকানো হয় রাজপথের এই পরীক্ষিত নেতাদের। এ জন্য তাদের অনেকেই গুলশান কার্যালয়ে যেতে চান না। এদিকে বেশ কয়েক দিন ধরে দল পুনর্গঠনের নামে ‘হুটহাট’ করে জেলা কমিটি ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে। এ কারণে বিএনপির তৃণমূলের পুরনো কোন্দল নতুনরূপে দানা বেঁধেছে। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, দল এখন উল্টো পথে হাঁটছে। শাস্তির ‘খড়গ’ তৃণমূলে কেন- এ প্রশ্নও উঠছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ছিল ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। নীতিনির্ধারকরা তাকে প্রাধান্য দেননি। ঢাকা মহানগরীতে নতুন কমিটি দেওয়ার কথা একাধিকবার বলা হলেও কার ‘ইশারায়’ তা আটকে আছে- এ নিয়ে নেতা-কর্মীরাও সন্দেহ-সংশয়ে রয়েছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটিও দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ।  দলের ভেতরে বিভিন্ন বিষয়ে নেতাদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্বীকারও করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, তিন নেতার জামিনের আবেদনে একজন ছাড়া দুজনকে জেলে পাঠানোর ঘটনায় কিছুটা সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। আমার মতে, এটা সরকারের একটি অপকৌশল। সরকার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে নানাভাবে সন্দেহ-অবিশ্বাস জন্মাতে কাজ করে।



মন্তব্য চালু নেই