বিএনপির ‘ঢাউস’ কমিটি আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

বিএনপির ‘ঢাউস’ কমিটি আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সর্ববৃহৎ এ কমিটি নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। শুধু তা-ই নয়, কমিটিতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের স্থান দেয়া এবং একে একে নেতাদের পদত্যাগ ও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি আরো বেশি সঙ্কটে পড়বে বলে মত তাদের। সে জন্য সদ্যঘোষিত এ কমিটি সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।

সম্মেলনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর গত শনিবার বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর পরই দুইজন নেতা এবং পরে আরো এক নেতা পদত্যাগ করেন। দলের গঠনতন্ত্রে ৩৫১ সদস্য পদ থাকলেও ৫০২ সদস্য ঘোষণা করায় অনেকেই এটিকে ‘ঢাউস’ কমিটি আখ্যা দেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এ কমিটি নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিএনপি কমিটির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে বিএনপি সমগ্র জাতির সাথে তামাশা করেছে। কারণ, বিএনপি এমন লোকদের দিয়ে তাদের কমিটি সাজিয়েছে যারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদেরও কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সমগ্র জাতির সাথে, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন সবার সাথেই প্রতারণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিএনপিকে তাদের গঠনতন্ত্র দেখা উচিত। এতে কতজন আছে এবং কিভাবে কমিটি গঠন হবে তা-ও দেখা উচিত।’ বিএনপির কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কী ধরনের রাজনৈতিক দল, তাদের কি কোনো নীতি বা নিয়মতান্ত্রিকতা কিছুই নেই। তারা জাতিকে কি-ই বা দিতে পারে।’

বিএনপির কমিটিকে সামরিক স্বৈরশাসকের রাজনীতির ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তই সব কিছু। চূড়ান্ত ক্ষমতা তারই। কাজেই তাদের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের প্রশ্নই ওঠে না। আর সম্মেলনে যারাই এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া তাদের সবাইকে কমিটিতে রেখেছেন।

দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বিএনপির কমিটিকে জাম্বো জেট সাইজের অগণতান্ত্রিক কমিটি আখ্যা দিয়ে একে বছরের সেরা তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যারা দলের গঠনতন্ত্র রক্ষা করতে পারে না তারা কিভাবে দেশের সংবিধান রক্ষা করবে। অগণতান্ত্রিক কমিটি দিয়ে দেশের গণতন্ত্র উদ্ধার হবে না।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির নবঘোষিত কমিটিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। তাদের মতে, বিএনপি এমনিতেই একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময় যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেই কমিটি থেকে কয়েকজন পদত্যাগও করেছেন। আরো কয়েকজন পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তারা এখন নিজেদের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। এ ছাড়া সরকারের মারমুখী অবস্থান এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। সে জন্য এ কমিটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা আলাপকালে বলেন, ‘যত বড় কমিটি দেয়া হোক না কেন কোনো লাভ নেই। সামনে বিএনপির জন্য আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে কী আন্দোলন করবে, নিজেদের ঘর সামলাতেই হিমশিম খাবে।’

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা আরো বলেন, ‘বিএনপি এখন গর্তে ঢুকে আছে। তারা বের হওয়ার চেষ্টা করলেই অতীতের মতো দমন করা হবে। সে জন্য যত বড় কমিটিই দেয়া হোক না কেন সরকারের জন্য চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ কমিটি সফল হতে পারবে না।’

অন্য এক নেতা বলেন, ‘সামনে বিএনপির জন্য আরো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইতোমধ্যেই সাজা দেয়া হয়েছে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলায় তার সাজা হলে অনেকেই বিএনপি থেকে কেটে পড়বে। এ ছাড়া তারা সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করলে সরকার তো আর বসে থাকবে না। তাদের আন্দোলন কিভাবে দমন করা যায় সেই অভিজ্ঞতা সরকারের রয়েছে। তাই বিএনপি কাদের নেতা বানিয়েছে, কী কমিটি দিয়েছে এবং কত বড় দিয়েছে তা নিয়ে সরকারের ভাবার কিছু নেই।’-নয়াদিগন্ত



মন্তব্য চালু নেই