বিএনপির ওপর ক্ষেপেছেন ফরহাদ মজহার

আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাদে জড়ালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।

বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আমার দেশ প্রকাশ এবং মাহামুদুর রহমানের মুক্তি ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে পেশাজীবী সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঈদের পরে বিএনপি আন্দোলন করবে। তাতে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে। তখন জামায়াত আর আওয়ামী লীগের বাজার হবে।’

তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনো ভারমুক্ত করা হয়নি। সেনাপতিকে ভারমুক্ত করা না হলে তিনি যুদ্ধ করতে পারবেন না।’ এমন বক্তব্যের সময় মির্জা ফখরুল ইসলামকে হাস্যজ্জ্বোল দেখাচ্ছিল।

মাহামুদুর রহমানের মুক্তি প্রসঙ্গে জাফরউল্লাহ বলেন, ‘পেশাজীবীদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে হবে। তিনি যদি কোর্টে দেখা না করেন তাহলে তার বাসার সামনে ৪ থেকে ৫শ পেশাজীবী গিয়ে দেখা করতে হবে।’

ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য সমর্থন করে কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমি বিএনপি করি না। কিন্তু আমি চাই না একটি গণতান্ত্রিক দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক।’

এরপর বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুইজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এ কথা আমরা অনেকবার শুনেছি। বায়তুল মোকাররমের সামনে বেগম খালেদা জিয়া প্রথম জনসভায় বক্তব্য দেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তাকে দেশের বাইরে পঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া বলেছিলেন এই দেশ ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না।’

‘তাই বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে উনারা (ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী এবং ফরহাদ মজহার) যে সন্দেহ পোষণ করেছেন। আমি বলবো আপনারা বিএনপির ইতিহাস দেখেন। যতদিন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নেতৃত্বে থাকবেন ততদিন বিএনপিকে বিলীন করা যাবে না’ বললেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আপনারা এরশাদের নাটক দেখেছেন। সে সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে অপসারণ করেছে। বেগম জিয়া সেদিন দলের হাল ধরেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্বে বিএনপি মূল ভূমিকা পালন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি থেকে বিএনপিকে বিলীন করা যাবে না। কারণ বিএনপির শক্তি গ্রামেগঞ্জে। আন্দোলনে নিশ্চই দেখছেন ৪ থেকে ৫শ মানুষ মারা গেছে।’ ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বক্তব্য চলাকালে ডায়াসে দাঁড়িয়ে ফরহাদ মজহার উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘আপনারা কেন আমাদেরকে এসব সমাবেশে ডাকেন। আমরা তো কেউ বিএনপি করি না।’ পরে রফিকুল ইসলাম মিয়া তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনো উত্থান থাকে কখনো পতন। তাই বলা যাবে না আন্দোলন থেমে গেছে, বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’

আমি হতাশ নই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনদিন নিশ্চিহ্ন হবে না। কারণ বিএনপি ৯৯ ভাগ মানুষের রাজনীতি। বেগম খালেদা জিয়া যে পতাকা ধরেছেন তা পড়বে না কখনো।’

নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন শুধু অযোগ্য নয় অথর্ব। তাদের কোনোকিছু করার নেই। নির্বাচন কমিশনাররা এমন সব কথা বলেন যাতে তাদের মধ্যে কোনো সৌজন্যতা নেই। দেশে যদি এখন অন্য সময় থাকতো তাহলে তাদের অবস্থা কি হতো এটা বলা কঠিন ছিল।’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রশাসন, সংবাদ মাধ্যম ও বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। তারা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা তা বিশ্বাস করে না। আর এসব কারণে তারা রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

জেলের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘কাশিমপুর ২ নম্বর কারাগারে এখনো ১১৫ জন বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক কর্মীরা প্রাণ দিচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে, জেল খাটছে মামলা হচ্ছে। তাই বলে বিএনপি কখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এটা ঠিক না। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের বিজয় হবেই।’

‘তাই আন্দোলনে বিজয় হতে হলে আমাদেরকে আরো ত্যাগ শিকার করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দেশে বর্তমান যে অবস্থা এই অবস্থার মধ্যে গোটা দেশের মানুষ আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ৩০০ এর অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ৬০ জন নেতাকর্মী গুম হয়েছে।’ বললেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা সেদিন বলেছেন নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। তারাও এখন বুঝতে পেরেছেন।’

সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) যুগ্ম-মহাসচিব এমএ আজিজ, শিক্ষাবিদ ড. পিয়াস করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



মন্তব্য করুন