বিএনপিতে চাপা কষ্ট!

এই প্রথম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বাইরে ঈদ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে আগামী মাসের শুরুর দিকে লন্ডন থেকে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সফরকালে দলের ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হবে। দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও নেতাকর্মীদের চাপা কষ্টও আছে।

কারণ ঈদে প্রথমবারের মতো খালেদা জিয়া দেশের বাইরে থাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঈদের দিনে প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না।

চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে যাওয়ার পর তিনি তার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। পরে অবশ্য খালেদা জিয়ার হোটেলে ওঠার কথা রয়েছে।

২০০৬ সালের পর যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সফর এটি। অন্যদিকে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে আসার পথে তারেক রহমানকে দেখতে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর গতবছর ওমরাহ পালনকালে সৌদি আরবে মা-ছেলের সর্বশেষ দেখা হয়। এবছরও ওমরা পালন করতে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সৌদি সফর বাতিল করেন বিএনপি প্রধান।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন গেছেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তাবিথ আউয়াল একই ফ্লাইটে লন্ডন যান।

এদিকে থাইল্যান্ড থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, বিএনপির অর্থ-বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন।

এছাড়াও খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান থাইল্যান্ড থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। জানা গেছে, এখন থেকে কোকোর স্ত্রী ও সন্তানরা তারেক রহমানের কাছাকাছি থাকবেন।

এদিকে প্রতি বছর ঈদে ঢাকায় দলের সিনিয়র নেতা, তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে খালেদা জিয়া ঈদ উদযাপন করেন। কিন্তু এবার এর ব্যত্যয় ঘটছে।

দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো ঈদ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, দলের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করা হলেও এবার সেটা হচ্ছে না। তবে ঈদের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকলেও ওইদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।

এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরে দুইবার দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তারা সাক্ষাতের সুযোগ পান। কিন্তু এবার সেই সুযোগ না থাকায় নিজেদের ‘বঞ্চিত’ মনে করছেন।

যদিও কেউ আবার দলের মঙ্গলের জন্য এই সফরের গুরুত্বের কাছে সাক্ষাৎ না পাওয়ার বিষয়টিকে এক করে দেখছেন না।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঈদের দিনে চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য নেতাকর্মী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই এটা যেমন সত্য। তেমনি তার দেশের বাইরে যার সঙ্গে সাক্ষাত হবে সেও আমাদের প্রিয়।তাই বঞ্চিত হলেও ভালো লাগছে যে নেত্রী একাকিত্ব কাটানোর সুযোগ পেলেন।”

আর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, “ঈদের আনন্দ আছে উচ্ছাস নেই।কারণ নেত্রী দেশে নেই।এটা এক ধরণের কষ্ট।কারণ ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানটি নেতাকর্মীদের ভালো লাগার মুহূর্ত।তবে আবার ভাবতে ভালো লাগে অনেক দিন পর চেয়ারপারসন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পেলেন।”

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “এটা শুধু মা-ছেলের সাক্ষাৎ নয়, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ। তারা দলের বর্তমান দুরাবস্থা, সাংগঠনিক দুর্বলতা, মামলা মোকাবেলায় আগামী দিনে দলের কর্মকৌশল ঠিক করবেন। এর ফলে আগামীতে দল আরও বেগবান হবে, লাভবান হবে।” ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই