‘বায়োমেট্রিক ডিভাইস’ এখন বিনোদন পণ্য!

বায়োমেট্রিক তথা আঙুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস (ট্যাব আকৃতির যন্ত্র) এখন মিউজিক ভিডিও ও মুভি দেখায় ব্যবহৃত হচ্ছে। রাস্তার পাশের খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা (রিটেইলার) এই ডিভাইসটিকে বর্তমানে বিনোদন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর, ১ নম্বর, আগারগাঁওয়ের তালতলা, মহাখালীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

যদিও সিম নিবন্ধনের জন্য দেওয়া এই ডিভাইস দিয়ে ‘সিম নিবন্ধন’ ছাড়া অন্যকিছু করার কথা নয়। তাই নিবন্ধন ছাড়া অন্য কোনও কাজে এই ডিভাইস ব্যবহার হলে এবং এর ফলে কোনও ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হলে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির।

সিম নিবন্ধনের জন্য বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ডিভাইসগুলো বেশিরভাগ সময় খুবই ব্যস্ত থাকত এনআইডি ডাটাবেজের সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখার কাজে। আর এখন আর সেই দৃশ্য নেই। নিবন্ধনের জন্য ভিড়ও নেই। নতুন সিম বিক্রির হারও আগের মতো নয়। ফলে অলস সময়ে (মোবাইলে রিচার্জ ব্যতিত) রিটেইলাররা ওই ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে ইউটিউবের ভিডিও দেখছেন, নয়তো মেমোরি কার্ড লাগিয়ে মুভি দেখছেন, কেউবা খেলছেন গেমস। কেউ কেউ বিভিন্ন সাইটে গিয়ে মুভি ডাউনলোডও করছেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলায় এক রিটেইলারকে দেখা গেল ইউটিউবে নাটক দেখছেন।

রিটেইলারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাম-কাইজ নাই। কি আর করব, সিরিয়াল দেখি। এই ডিভাইসে এসব দেখা ঠিক কিনা জানতে চাইলে রিটেইলার বলেন, এই ট্যাবে যে এসব দেখা যাবে না তা তো আমাদের কেউ বলে নাই। ফেলে রেখে লাভ কি। যা যা করা যায় (গান শোনা, মুভি দেখা, গেম খেলা ইত্যাদি) সবই করব।

মিরপুর ১১ নম্বরের সিম নিবন্ধনকারী (খুচরা সিম বিক্রতা) মোহাম্মদ পলাশ তার ডিভাইসে গেম খেলছিলেন মেমোরি কার্ড লাগিয়ে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় কাটানোর দারুণ একটা উপায় পাওয়া গেছে। সব সময় তো আর সিম বিক্রি হয় না। রিচার্জও করতে আসে না লোকজন। তখন গেম খেলি, সিনেমার গান দেখি, নাটক দেখি। পলাশ বললেন, এতে পেন ড্রাইভ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যায়। ডিভাইসে গান, ভিডিও এবং ছবিও রাখা (সংরক্ষণ) গেলেও এতে আঙুলের ছাপ রাখা যায় না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম বলেন, এসব বিষয় তো মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর দেখভাল করার কথা। তিনি বলেন, এই ধরনের কাজের জন্য সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনও ধরনের যদি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হয় বা আমাদের কাছে রিপোর্ট আসে তাহলে আমরা এ বিষয়ে কঠোর হব। ছাড় দেওয়ার কোনও ধরনের সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, এর আগে রিটেইলারদের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সে বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের তার বিভাগে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজরদারি করতে বলেছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছিলেন। রিটেইলারদের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা ঘটার অভিযোগ সেসময়েও উঠেছিল। এবারও সেই রিটেইলাররাই ডিভাইসটাকে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। কাজের ফাঁকে ব্যবহার করছে বিনোদন ডিভাইস হিসেবে।



মন্তব্য চালু নেই