বাস্তবের দুর্ধর্ষ নারী সন্ত্রাসীরা!

নরীকে সবসময় কোমলমতি, শান্ত আর স্নিগ্ধ হিসেবেই ভাবতে পছন্দ করে মানুষ। নরম চাদরে আগলে রাখতে চায় নারী শব্দটিকে। নারী বলতেই মা, বোন আর মমতাময়ীদের কথা মনে পড়ে যায় আমাদের এক এক করে। কিন্তু সব নারীই কি একই রকম? এমনটাই কোমল আর নরম স্বভাবের? না! পুরুষের মতন নারীর ভেতরেও রয়েছে হিংস্র আর নেতিবাচক একটা দিক, যেটি গড়তে জানেনা। বরং জানে ভাঙতে। আর সেই রূপের পরিপূর্ণ বিকাশ হিসেবেই আজ উল্লেখ করা হল এমন কিছু নারীর নাম, যারা খ্যাতিমান। তবে ঝলমলে আলোর পৃথিবীতে নয়। অন্ধকারময় আন্ডারওয়ার্ল্ডে। যাদেরকে মমতাময়ী নয়, বরং ডন নামেই বেশি পরিচিত।

১. গার্ট্রুড লিথোগ

মাদকদ্রব্য চোরাচালানীর ব্যবসায় নারী হিসেবে প্রথম পা রাখেন গারট্রুড। সেসময় আমেরিকায় মাদকদ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে বাইরের অনেক রপ্তানীকারকের পকেটেই টান পড়ে। আর ঠিক এই সুযোগটাই লুফে নেন তিনি। লন্ডনের এক মাদক রপ্তানীকারকের সাথে পরিচয়ের সূত্রে নাসাউ এ নিজের মদের ব্যাবসা খুলে বসেন গারট্রুড। বাহামা আর নাসাউ ছিল এক্ষেত্রে তার মূল ঘাঁটি। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে গারট্রুডের আগমনের সাথে সাথে বাহামা থেকে চোরাপথে আসা মদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯১৭ সালে ৪৭,৩০০ লিকার মদ আসত আমেরিকায়, যা কিনা ১৯২৩ এ বেড়ে দাড়ায় ৯,৫০,০০০ লিটারে। প্রথমদিকে নারী হওয়ায় মানুষের সন্দেহের কবলে পড়তে হলেও সেগুলোকে গায়ে না মেখে সামনে এগিয়ে যান গারট্রুড। নারী হবার কারণে কেউ তার সাথে দামাদামিও করতে আসত না। ফলে কিছুদিনের ভেতরেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে গারট্রুডের ব্যবসা। বাহামা কুইন হিসেবে উপাধি পেয়ে বসেন তিনি। মাঝে ১,০০০ কেস মদ চোরাপথে আনার অভিযোগে নিউ অরলিন্স থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই নারী ডনকে ( অ্যামাজন )। তবে কিছুদিনের ভেতরেই জেল বেরিয়ে এসে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন গারট্রুড। এবং শেষ অব্দি নিজের মাদক চোরাচালানীর রাজ্য ছেড়ে বাহামা কুইন পাড়ি জমান লস অ্যাঞ্জেলসে। ৮৬ বছর বয়সে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।

২. র‍্যাফেলা ডি. অল্টারিও

ইটালিয়ান এই মাফিয়া গডমাদার ছিলেন ক্যামোরা পরিবারের একজন। এমনিতে একজন সাধারণ নারী হিসেবে জীবনযাপন করলেও ২০০৬ সালে বুলেটের আঘাতে স্বামী নিকালো পায়ানস এর মৃত্যুর সাথে সাথে অন্ধকার জগতে পা রাখেন তিনি। ডি অল্টারিও একে একে স্বামীর সব অপরাধগুলোতেই নিজেকে জড়িয়ে নেন। খুন, মাদক পাচার, অবৈধ টাকাসহ আরো নানাধরণের অবৈধ কাজ হয়ে ওঠে অল্টারিওর নিত্যদিনের ব্যাপার। ঝটিকা বন্দুকের আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসার পর তার উপাধি হয়ে দাড়ায় মিকোনিয়া বা বৃহত্ বিড়ালছানা। এর মাঝেই তিনি ৯ টি খুন করে ফেলেছিলেন। এসময় তিনি ক্যামোরা পরিবারের আর সবার সাথে হাত মেলান তিনি এবং একে একে আধিপত্য সৃষ্টি করেন সব ধরণের ব্যাপারে। ইটালিয়ান পুলিশের মতে প্রতি বছর তারা ২১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতেন। ২০১২ সালে পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালালে অল্টারিও ধরা পড়েন। সাথে ধরা পড়ে তার ৬৫ জন সহযোগীও। সেসময় পুলিশ গাড়ি থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার ও মালামাল জব্দ করে।

৩. . মার্লোরি ডেডিয়ানা চ্যাকোন রোসেল

মার্লোরিকে ল্যাটিন আমেরিকার সবচাইতে বড় আর শক্তিশালী মাদক ব্যবসায়ী বলে মনে করা হয়। মধ্য আমেরিকার সবচাইতে বড় মাদক চোরাচালানের হোতা এবং গুয়েতেমালার সবচাইতে বড় টাকা রুপান্তরকারী হিসেবে চেনে সবাই তাকে। যদিও গুয়েতেমালা থেকে আমেরিকায় পাচার করা কোকেইনের বিরাট একটি অংশের জন্য দায়ী ছিলেন মার্লোরি তার প্রধান দক্ষতা ছিল টাকা পরিশোধনে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা তার হাত দিয়ে কালো থেকে সাদায় রুপান্তরিত হত। নিজের এই অবৈধ ব্যবসাকে বৈধতা দিতে বিংগোটোন মিলানোরিও নামক একটি লটারির ব্যবস্থা করেন মার্লোরি। তবে এতকিছু করেও শেষ অব্দি শেষরক্ষা হলোনা। বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ বা ওএফএসি বিভাগের চোখে পড়েন মার্লোরি এতসব কাজের জন্যে। তারা মার্লোরি ও তার সংগঠনকে তালিকাভূক্ত করে মাদক চোরাচালানের সন্দেহে। মাদক চোরাচালান ও ম্যাক্সিকান মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ থাকার অপরাধে তারা তাকে সন্দেহ করে এবং অনেক চেষ্টাও করে হাতেনাতে ধরে ফেলার। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হয়। এখনো পর্যন্ত মার্লোরির বিরুদ্ধে কোন শক্ত প্রমাণ আনা সম্ভব হয়নি এবং ফলে এখনো এই নারী ডন মুক্তভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

৪. শারমেইন রোমান

জ্যামাইকান মাদকসম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত শারমেইনের আওতায় বছরে টন টন মারিজুয়ানা পাচার হয় মধ্য ফ্লোরিডায়। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে একই সাথে দুর্ধর্ষ, দক্ষ ও সফল বলে ধরে নেওয়া যায়। একটা সময় এই একটি সংগঠনের মাধ্যমেই কোটি কোটি ডলার প্রতি বছর ঘরে তুলেছেন এই নারী ডন। কেবল মাদক চোরাচালানের প্রতিই মন ছিলনা শারমেইনের। তিনি ভালোবাসতেন নানা ধরনের গাড়ি ও অন্যান্য বিলাসবহুল জিনিস কিনতে। বেশ খরুচে হবার দরুন একটা সময় গোয়েন্দাদের নজরে পড়তে হয় তাকে। খানিকটা দেরী হলেও অরল্যান্ডো পার্কিং লটে ১৮০ কেজি মারিজুয়ানা সরবরাহ করার সময় ধরা পড়েন শারমেইন পুলিশের হাতে। তাকে ধরার সাথে সাথে পুলিশের হাতে আসে ১,৪৫০ কেজি মারিজুয়ানা, ২০০,০০০ ক্যাশ ডলার ও ৫০ জন অপরাধী ( লিস্টভার্স )। তবে শারমেইনের প্রচুর পরিমান ছদ্মনামের ফলে এখন অব্দি পুলিশকে তদন্ত হচ্ছে এই নারী ডনের আসল নাম জানার জন্যে।



মন্তব্য চালু নেই