বামন গ্রহের গায়ে তো বিশাল ‘কামড়ের দাগ’!

বামন গ্রহের গায়ে তো বিশাল ‘কামড়ের দাগ’! প্রায় ৩৯ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এমনটাই দেখতে পেয়েছে নাসার ‘নিউ হরাইজন ‘ মহাকাশযান৷ ছবিও তুলেছে৷ কামড়ের দাগ বলে যা মনে হচ্ছে, তা আসলে রাসায়নিক কারণে এ গ্রহের গায়ে ব্যাপক গঠনগত ভাঙাগড়ার চিহ্ন৷ যার জেরে আক্ষরিক অর্থেই ‘পরিবেশে মিলিয়ে যাচ্ছে’ মালভূমি৷

সেই জায়গায় মাথা চাড়া দিচ্ছে বিশাল সমতল এলাকা৷ কেমন করে? প্লুটোর পশ্চিম গোলার্ধের এক প্রান্তে অবস্থিত ওই মালভূমি এলাকা৷ সাধারণ ভাবে তা পরিচিত ‘ভেগা টেরা’ নামে৷ মালভূমির গায়ের খাড়া গিরিখাতগুলিকে ‘পিরি রুপ্স’ বলা হয়৷ প্রধানত জমাট মিথেনের ‘বরফ’ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মালভুমি৷ কিন্ত্ত নিউ হরাইজনের ছবি এই মালভূমিতে এক বিশাল পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত করছে৷ জমাট অবস্থা থেকে দ্রুত গতিতে গ্যাসে পরিণত হচ্ছে মিথেন৷

এই রাসায়নিক ঘটনাকে ‘সাবলিমেশন’ বলে৷ এর জেরে ক্রমেই দক্ষিণ দিকে সরে যাচ্ছে পিরি রুপসের খাড়াই দেওয়াল৷ উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে নীচের শক্ত মিথেনের স্তর৷ আর তার ধারে ভাঙন লেগে বিভিন্ন জায়গায় খণ্ড-খণ্ড হয়ে যাচ্ছে৷ সেই জায়গায় ‘পিরি প্ল্যানিশিয়া’ সমতলভূমির এলাকা বেড়েই চলেছে৷

সে জন্যই মনে হচ্ছে মালভূমির কিছুটা অংশ কেউ যেন জায়গায় জায়গায় কামড়ে খেয়ে ফেলেছে৷ উঁচু এলাকার তুলনায় এই সমতলে পাথরের মতো জমাট মিথেনের বরফের পরিমাণ অনেক বেশি৷ উপরের মিথেন প্লুটোর বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ায় সেটাই বাইরে বেরিয়ে পড়ছে৷ গত বছরের ১৪ জুলাই নিউ হরাইজনের তোলা ওই ছবিতে প্লুটোর ৪৫০ কিলোমিটার লম্বা ও ৪১০ কিলোমিটার চওড়া এলাকাকে দেখা যাচ্ছে৷

প্লুটোর থেকে সবথেকে কম দূরত্বের অবস্থানে আসার ৪৫ মিনিট আগে ছবিটি তোলা হয়৷ পরে ৪৭ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে লেইসা (রালফ/লিনিয়ার এটালন ইমেজিং স্পেকট্রাল অ্যারে) যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করে৷ প্লুটোর অতি দ্রুত ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রমাণ এর আগেও ধরা পড়েছে নিউ হরাইজনের তোলা একটি ছবিতে৷

তাতে দেখা গিয়েছিল , গ্রহটির জমাট বাঁধা নাইট্রোজেন গ্যাসের সমুদ্র ‘স্পুটনিক প্লেনাম’-এর বরফের টুকরো-টুকরো পাহাড় ভেসে চলেছে৷ নাসার হিসেব অনুযায়ী, সেগুলির একেকটি অন্তত দেড় কিলোমিটার থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া৷

বিজ্ঞানীদের অনুমান, স্পুটনিক প্লেনামের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত বরফের এলোমেলো পাহাড়ি এলাকার ধারে-ধারে ভাঙন লেগেই এই টুকরোগুলি তৈরি হয়েছে৷ তরল নাইট্রোজেন গ্যাসের থেকে বরফ হাল্কা হয় বলেই সেগুলি স্পুটনিক প্লেনামে ভাসতে ভাসতে চলেছে৷ ঠিক যে ভাবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে ছোট-বড় অনেক আকারের হিমশৈলই ভেসে বেড়ায়৷



মন্তব্য চালু নেই