বাবা-মা হত্যা : ১১ বছর পর দায় স্বীকার ৪ ভাইয়ের

গাজীপুরের বাসন এলাকায় ১১ বছর আগে বাবা ও সৎ মাকে হত্যা এবং সৎ ভাইকে সিলেটের শাহজালাল (র.)-এর মাজারে রেখে আসার কথা স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃত চার ভাই।

শনিবার সকালে র‌্যাব-১ এর এএসপি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবের নেতৃত্বে একটি দল বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চার ভাইকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- বাসন কালিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. রমজান আলী (৫০), মো. বাবুল হোসেন, মো. আরফান আলী (৩৫), মো. আকরাম আলী (৩০)। এ সময় তাদের অপর ভাই আহসান হাবিব (৪৫) পালিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, গত ২০০৫ সালে হঠাৎ করেই মোহাম্মদ আলী (৬০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী চায়না খাতুন (২৫) এবং তাদের চার বছরের ছেলে ইমরান আলী নিখোঁজ হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের সম্বন্ধে খোঁজ নিলে মোহাম্মদ আলীর প্রথম ঘরের সন্তানরা জানায়, তাদের বাবা রাগ করে দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে রংপুর চলে গেছে। এর আগেও সে রাগ করে রংপুর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে চলে গিয়েছিল, তাই প্রতিবেশীরাও কোনো সন্দেহ করেনি। এ ঘটনায় তার ছেলেরা কোনো জিডি বা আইনি কার্যক্রম করেনি। পরে মেয়ে ও নাতির কোনো খবর না পেয়ে চায়না খাতুনের মা গাজীপুর এলে অনেকেই তাকে বলে যে, তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। দীর্ঘদিন পার হওয়ায় এবং অন্যান্য চাপে পড়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় তিনিও আর ঢাকায় আসেননি। পরে তিনি র‌্যাবের শরণাপন্ন হয়ে তার মেয়ে, জামাই ও নাতির রহস্যময় অন্তর্ধানের বিষয়টি অবহিত করে।

অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১ বিষয়টির তদন্তে নামে। অভিযোগে উল্লিখিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই তিনজন দীর্ঘদিন যাবৎ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ এবং অনেকে জানায়, তারা নাকি রংপুরে চলে গেছে। পরে রংপুরে মোহাম্মদ আলীর শ্বশুর বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাদের হদিস না মেলায় সন্দেহ আরো প্রকট হয় যে, হয়তোবা তাদের তিনজনকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে এবং পরে রংপুরে চলে যাওয়াকে সামনে এনে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা শনিবার ওই চার ভাইকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, ২০০৫ সালেই তারা তাদের বাবা ও সৎ মাকে হত্যা করে লাশ বস্তায় করে তুরাগ নদীতে ডুবিয়ে দেয় এবং সৎ ভাই ইমরানকে সিলেটের শাহজালাল (রঃ)-এর মাজারে রেখে আসে। তারা র‌্যাবকে আরো জানায়, দ্বিতীয় বিয়ের পর বাবা এবং তাদের আপন মায়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত। পরে ২০০৫ সালে তাদের বাবা সৎ মাকে ১০ শতাংশ এবং সৎভাই মো. ইমরানকে ১০ শতাংশ জমি লিখে দেয়। ওই জমি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাবার সঙ্গে তাদের প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। জমি দেওয়ার এক সপ্তাহ পর তারা পাঁচ ভাই রাত ১১টার দিকে তাদের বাবা এবং সৎ মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ দুটি বস্তায় ভরে তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়। ওই রাতেই ৩টার দিকে মো. বাবুল ও আহসান তাদের সৎ ভাই ইমরান আলীকে (৪) নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সিলেটে যায় এবং সেখানে ইমরানকে ফেলে গাজীপুর চলে আসে।

শনিবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করার পরে তাদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তুরাগ নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি করেও লাশের অংশবিশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব জানায়, নিখোঁজ ইমরানকে খোঁজার জন্য র‌্যাবের আরেকটি দল সিলেটে শাহজালাল মাজার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই