বাবাকে বাঁচাতে নিজের বুকের দুধ খাইয়েছেন যে মেয়ে…

নিজের সন্তানকে মায়েরা বুকের দুধ পান করাবেন এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু একজন মা শুনিয়েছেন অদ্ভুত এক গল্প। তিনি তার মুমূর্ষু বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে পান করিয়েছিলেন স্তনদুগ্ধ। এই মায়ের নাম হেলেন ফিজসিমনস। তার বাবার নাম আর্থার ইস্টমণ্ড।

যখন ডাক্তাররা আবিষ্কার করলেন আর্থার মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত তখন পৃথিবীতে তার আয়ু বেঁধে দিলেন মাত্র কয়েকমাস। ক্যান্সারে শরীরে বাসা বাঁধলে যে তাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই সেটা সবাই জানে। কিন্তু অনেকেই যেটা জানে না সেটা হচ্ছে, বুকের দুধে এমন পদার্থ রয়েছে যেটা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ।

৪০ বছর বয়সী হেলেন যখন দেখলেন বাবার এই অবস্থা তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বাবাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। এটা যে অস্বাভাবিক এবং বিতর্কিত একটি কাজ সেই ব্যাপারে তিনি সচেতন। কিন্তু গবেষণা বলছে, বুকের দুধে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাহলে সে কি তার বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে না?

৭৩ বছর বয়স্ক ইস্টমণ্ড এবং তার ৬৯ বছর বয়স্ক স্ত্রী(হেলেনের মা) জিন ঠিক করলেন চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই। ইস্টমুণ্ড প্রতিদিন ৬০ মিলিলিটার বুকের দুধ পান করা শুরু করলেন। এতে করে তার শরীরের বিপজ্জনকভাবে বাড়তে থাকা প্রোটিনের মাত্রা সাথে সাথে কমে গেলো।

ইস্টমণ্ড পেশায় একজন কামার ছিলেন। ৮ জন নাতি নাতনির মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। প্রথম অবস্থায় তার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল অস্থিমজ্জায়। এর ১৬ মাস পরে ধরা পড়ে প্রোস্টেট (মুত্র থলির) ক্যান্সার। গত বছরের ইস্টারে আর্থার ইস্টমুণ্ড মারা গেছেন।

ইংল্যান্ডের চেথেলহ্যামের বাসিন্দা হেলেন বলেন, ‘আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমার বাবা তার আয়ুর থেকে অতিরিক্ত ১২ মাস বেঁচে ছিলেন শুধুমাত্র বুকের দুধের কারণে। যে অতিরিক্ত সময় আমরা পেয়েছি সেটা ছিল অমুল্য সময়। আমি জানি বিষয়টা অদ্ভুত এবং বিতর্কিত। কিন্তু বাবাকে বাঁচানোর জন্য যে কোন কিছু আমি করতে রাজি ছিলাম।’

হেলেন যে শুধু তার নিজের বুকের দুধ খাইয়েছেন তাই না, দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কাছের বন্ধু ও আত্মীয়ের বুকের দুধও ধার নিয়েছেন। দুধ যাতে বিন্দুমাত্র নষ্ট না হয় সেজন্য সব ধরনের সতর্কতাও তিনি অবলম্বন করেছেন।

২০০৯ সালে ইস্টমুণ্ডের মেলোমা ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই রোগে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে যখন তার আবার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন তাকে কিমো থেরাপি দেয়া হয়েছিল।

হেলেন বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের জন্য ভয়ানক একটা অবস্থা। কারণ এইবার তার শরীরে বাসা বেঁধেছে দুটো ক্যান্সার।’ ঐ অবস্থাতেই আসলে হেলেনের মাথায় প্রথম বুকের দুধের চিন্তাটা আসে।

বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যারল সিকোরা জানিয়েছেন, বুকের দুধে ক্যান্সার রোগীদের উপকার হয় সত্যি। কিন্তু এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। এটা যদিও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চাঙ্গা করে, কিন্তু আমি এটা পান করার পরামর্শ দেবো না কাউকে।

যদিও ডাক্তাররা খুব একটা আশা দেয়নি, কিন্তু বেশ কয়েকটি গবেষণায় এর ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। সুইডিশ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, বুকের দুধে এমন একটি প্রোটিন রয়েছে, যেটা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। এতে করে হেলেনের মনে আশার উদয় হয়েছিল যে, এটা হয়তো প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে।

তবে তারা খুবই অবাক হয়েছিলেন যখন বুকের দুধ খাওয়ানোর পর ডাক্তার বলেছিল যে, ইস্টমুণ্ডের শরীরে বেড়ে যাওয়া প্রোটিনের মাত্রা কমে গেছে। হেলেন জানেন কেবল মাত্র বুকের দুধেই এটা হয়েছে, অন্য কিছুতে না। ডাক্তাররা অবশ্য ব্যাপারটা পাত্তা দেয়নি।

হেলেন বলেন, ‘আমি আশা করি আমার এই ছোট্ট উদ্ভট গল্পটা থেকে গবেষকরা ও বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় ক্যান্সার রোধে বুকের দুধের উপকারিতার রহস্য খুঁজে পাবেন। আমার জন্য এটা ছিল প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। যে যাই বলুক না কেন, বাবা মরার আগে বলেছেন, তিনি কৃতজ্ঞ। যে আমাকে এতো আদর যত্নে পৃথিবীতে বড় করেছে, তার পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় তাকে যে কৃতজ্ঞ করতে পেরেছি সেটা আমার সৌভাগ্য।



মন্তব্য চালু নেই